সূর্যমুখী বীজ খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন
সূর্যমুখী বীজ খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে আপনাদের বিস্তারিত জেনে নেওয়া
প্রয়োজন। কেননা সূর্যমুখী বীজ আমাদের স্বাস্থ্যের পক্ষে নানা গুরুত্বপূর্ণ
ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই এর সম্পূর্ণ গুনাগুন সম্পর্কে খুব ভালোভাবে জানা
প্রয়োজন।
সূর্যমুখী বীজ খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে নিচের দেওয়া
লেখাগুলো খুব যত্ন সহকারে পড়ার চেষ্টা করতে হবে। তাহলেই মূলত আপনারা সূর্যমুখী
বীজের যাবতীয় গুণাবলী সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে যেতে পারবেন।
সূচিপত্রঃ সূর্যমুখী বীজের যাবতীয় গুণাবলী সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জেনে নিন
- সূর্যমুখী বীজ খাওয়ার উপকারিতা
- সূর্যমুখী বীজ খাওয়ার নিয়ম
- সূর্যমুখী বীজের অপকারিতা
- গর্ভাবস্থায় সূর্যমুখী বীজ খাওয়ার উপকারিতা
- সূর্যমুখী বীজের পুষ্টিগুণ
- পুরুষদের জন্য সূর্যমুখী বীজের উপকারিতা
- সূর্যমুখী বীজের পুষ্টি উপাদান
- ত্বকের জন্য সূর্যমুখী বীজের উপকারিতা
- সূর্যমুখী বীজ সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর
- লেখকের শেষ কথা
সূর্যমুখী বীজ খাওয়ার উপকারিতা
সূর্যমুখী বীজ খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আপনারা জানতে চেয়েছেন। আজকের এই পর্বে
আমরা সূর্যমুখী বীজ খাওয়ার যাবতীয় উপকারিতা সম্পর্কে আপনাদের বিস্তারিত জানানোর
চেষ্টা করবো। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক। সূর্যমুখী বীজ খাওয়ার ফলে বেশ কিছু
গুরুত্বপূর্ণ উপকারিতা সাধিত হয়ে থাকে। নিচের আলোচনায় তা দেখানো হলোঃ
- হাড়ের গঠনে সহায়তা করেঃ সূর্যমুখী বীজে রয়েছে ম্যাগনেসিয়াম এবং ক্যালসিয়াম নামক উপাদান। এই দুটি উপাদান থাকার কারণে সূর্যমুখী বীজ খাওয়ার ফলে হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো থাকে।
- বয়সের ছাপ প্রতিরোধ করেঃ সূর্যমুখী বীজে থাকা ভিটামিন ই ত্বকে বলিরেখা পড়া থেকে রক্ষা করে থাকে। একই সঙ্গে সূর্যমুখী বীজে থাকা ভিটামিন ই এবং বিটা ক্যারোটিন ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখতে সহায়তা করে। যার ফলে ত্বকের উজ্জ্বল ভাব ঠিক থাকে। পাশাপাশি সূর্যমুখী বীজে থাকা বিটা ক্যারোটিন ত্বককে সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে রক্ষা করে থাকে। এছাড়াও সূর্যমুখী বীজে থাকা অ্যান্টি এজিং প্রপার্টিজ ত্বকে বয়সের ছাপ পড়া রোধ করতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে।
- ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করেঃ সূর্যমুখী বীজ নিয়মিত খাওয়ার ফলে ডায়াবেটিস প্রতিরোধ হয়ে থাকে। কেননা সূর্যমুখী বীজ খাওয়ার ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে। যার কারণে টাইপ ২ ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়।
- হৃদরোগের আশঙ্কা কমায়ঃ সূর্যমুখী বীজ খাওয়ার ফলে হৃদরোগের আশঙ্কা কমে থাকে। কেননা এতে রয়েছে মেনো এবং পলিঅ্যানস্যাচুরেটেড ফ্যাট যা মূলত হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। পাশাপাশি এটি শরীর থেকে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
- ব্যথা নিরাময়ে সাহায্য করেঃ সূর্যমুখী বীজ খাওয়ার ফলে গ্যাঁটে ব্যথা দূর হয়ে থাকে। পাশাপাশি এটি পেশীর যন্ত্রণা কমাতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। একই সঙ্গে এটি শরীরের দীর্ঘদিনের ব্যথা যন্ত্রণা প্রশমিত করতেও কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে।
- ত্বকের যত্নে সাহায্য করেঃ সূর্যমুখী বীজ ত্বকের যত্নে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে। এতে থাকা অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি ফাঙ্গাল নামক উপাদান ত্বকের নানা ইনফেকশন দূর করতে সহায়তা করে থাকে। পাশাপাশি এটি ত্বকের দাগ ছোপ দূর করতেও সহায়তা করে থাকে।
- অ্যানিমিয়া প্রতিরোধেঃ যাদের আয়রনের অভাবে শরীরে রক্তস্বল্পতা দেখা দেয়। তাদের জন্য সূর্যমুখী বীজ দারুন কার্যকরী হতে পারে। কেননা এটি আয়রনের ঘাটতি পূরণ করে অ্যানিমিয়া প্রতিরোধ করে থাকে।
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতেঃ সূর্যমুখী বীজে রয়েছে ভিটামিন ই, সেলেনিয়াম, জিংক ইত্যাদি নানা গুরুত্বপূর্ণ খনিজ উপাদান। পাশাপাশি রয়েছে শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। যার কারনে এই বীজটি খেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়ে থাকে।
- হজম ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলেঃ সূর্যমুখী বীজে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ফাইবার। যার কারণে এটি খেলে হজম প্রক্রিয়া ভাল হয়। একই সঙ্গে পেট পরিষ্কার হয়ে থাকে। পাশাপাশি এটি খাওয়ার ফলে পেট ফোলার মতো সমস্যা প্রতিরোধে হয়ে থাকে।
- মন ভালো রাখেঃ সূর্যমুখী বীজ খাওয়ার ফলে মন ভালো থাকে। কেননা সূর্যমুখী বীজে রয়েছে ভিটামিন বি এবং সেলেনিয়াম। এই দুইটি উপাদান বিভিন্ন কারণে হওয়া মন খারাপ সমস্যা প্রতিরোধে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে।
- চুলের সমস্যা প্রতিরোধেঃ সূর্যমুখী বীজ নতুন চুল গজাতে সহায়তা করে থাকে। সাধারণত মাথার স্কাল্পে রক্ত সঞ্চালন ঠিকভাবে না হলে নতুন চুল গজায় না। সূর্যমুখী বীজ ব্যবহার করার ফলে এতে থাকা ভিটামিন ই এবং জিংক মাথার স্কাল্পে রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে তুলে। যা নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে। পাশাপাশি এতে থাকা ভিটামিন বি৬ চুল ঝরে পড়া প্রতিরোধ করে থাকে
- ওজন কমাতে পারেঃ সূর্যমুখী বীজে থাকা পলিস্যাচুরেটেড ওজন কমাতে সহায়তা করে। পাশাপাশি এতে থাকা ভিটামিন ই এবং ভিটামিন বি শরীরের অতিরিক্ত ক্যালরি বার্ন করতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে। এছাড়াও এটি পুষ্টিকর হওয়ায় আপনার পেটকে দীর্ঘ সময় ধরে ক্ষুধা মুক্ত রাখবে। যা আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে।
- কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়ঃ সূর্যমুখী বীজে পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালরি থাকে। যার কারণে এই বীজ খাওয়ার ফলে অন্যান্য আরো উচ্চ কোলেস্টেরলযুক্ত খাবারের প্রতি তেমন আগ্রহ জন্মায় না। যার কারণে অটোমেটিক শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ থাকবে।
- হার্টকে সুস্থ রাখতেঃ সূর্যমুখী বীজে রয়েছে হেলিয়ানথিনের মতো ফাইটোকেমিক্যাল, প্রোটিন, ভিটামিন ই। এই উপাদানগুলো শরীরে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। যার ফলে হার্ট সুস্থ থাকে।
- উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখেঃ সূর্যমুখী বীজে রয়েছে ভিটামিন ই, ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এ সকল উপাদানগুলো উচ্চ রক্তচাপ রোগীদের জন্য বিশেষ কার্যকরী ভূমিকা রাখে। যার ফলে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ হয়ে থাকে।
- ক্যান্সার প্রতিরোধেঃ সূর্যমুখী বীজে বিটা সিটোস্টেরল অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যার কারণে এটি খাওয়ার ফলে স্তন ক্যান্সারের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। পাশাপাশি এটি অন্যান্য ক্যান্সার প্রতিরোধ করতেও কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে।
- মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতেঃ সূর্যমুখী বীজ খাওয়ার ফলে মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি হয়ে থাকে। কেননা এতে থাকা ম্যাগনেসিয়াম এবং ট্রিপটোফান মানসিক চাপ কমিয়ে থাকে। পাশাপাশি এটি ভালো ঘুম হতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে।
সূর্যমুখী বীজ খাওয়ার নিয়ম
সূর্যমুখী বীজ খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে আপনারা জানতে চেয়েছেন। আজকের এই পর্বে
আমরা সূর্যমুখী বীজে খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জেনে নেওয়ার চেষ্টা
করবো। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক। সূর্যমুখী বীজ খাওয়ার বেশ কয়েকটি নিয়ম
রয়েছে। নিচের আলোচনায় তা দেখানো হলোঃ
- সূর্যমুখী বীজ দুই ভাবে খাওয়া যেতে পারে। এটি আপনারা চাইলে ভেজেও খেতে পারেন। আবার কাঁচাও খেতে পারেন। কাঁচা খাওয়ার ফলে এর সম্পূর্ণ পুষ্টি পাওয়া যায়। তবে এটি ভেজে এর সাথে হালকা লবণ বা মসলা মিস করে খেলে স্বাদ আরো ভালো পাওয়া যায়।
- সূর্যমুখী বীজ খাওয়ার আগে এটি ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিতে হবে এবং রোদে শুকিয়ে নিতে হবে। যারা শরীরের ক্যালরি নিয়ন্ত্রণ করতে চান তাদের সূর্যমুখী বীজ কম খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে।
- নিয়মিত ১ থেকে ২ চামচ সূর্যমুখী বীজ খাওয়া যেতে পারে। এর থেকে বেশি খাওয়ার চেষ্টা করবেন না। কেননা এর থেকে বেশি খেলে শরীরে ক্যালরি বেড়ে যেতে পারে।
- বাড়িতে যখন সালাদ কিংবা স্যুপ তৈরি করবেন, তখন এর সাথে সূর্যমুখী বীজ ছিটিয়ে খেয়ে নিতে পারেন।
- বাসা বাড়িতে রুটির ডো তৈরি করার সময় সূর্যমুখী বীজ ব্যবহার করতে পারেন।
- স্মুদির সাথে সূর্যমুখী বীজ মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে।
- বিকাল বেলায় সূর্যমুখী বীজ স্ন্যাকস হিসেবে খাওয়া যেতে পারে।
- সকাল বেলা খাবারের নাস্তায় ওটস মিল এবং দই খাওয়ার সময় এগুলোর সাথে সূর্যমুখী বীজ ছিটিয়ে দিয়ে খাওয়া যেতে পারে।
- সূর্যমুখী বীজ বিভিন্ন ধরনের বাদাম যেমন হতে পারে কাঠবাদাম, পেস্তা, আখরোট ইত্যাদির সাথে এই বীজ খাওয়া যেতে পারে।
- প্রতিদিন ২০ থেকে ৩০ গ্রাম সূর্যমুখী বীজ খাওয়া যেতে পারে। এটি সকালে সরাসরি হাতের মুঠোয় নিয়ে চিবিয়ে খাওয়া যেতে পারে এবং দুপুর ও সন্ধ্যায় বিভিন্ন রান্নায় এটি মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে।
- যে সকল ব্যক্তিরা শরীরের কোথাও আঘাত বা প্রদাহ জনিত সমস্যায় ভুগছেন তারা সূর্যমুখী বীজটি নিয়মিত খেতে পারেন।
- নিয়মিত সূর্যমুখী বীজ সকালবেলা খাওয়ার ফলে সারাদিনের জন্য শরীরে প্রয়োজনীয় শক্তি পাওয়া যায়। যার ফলে যে কোন কাজ করতে এনার্জি পাওয়া যায়।
- এক গ্লাস গরম দুধে সূর্যমুখী গুঁড়া মিশিয়ে খেলে ঠান্ডা লাগা, সর্দি, কাশি, জ্বর ইত্যাদি নানা সমস্যা প্রতিরোধ হয়ে থাকে। পাশাপাশি এটি শ্বাসযন্ত্র সচল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
সূর্যমুখী বীজের অপকারিতা
সূর্যমুখী বীজের অপকারিতা সম্পর্কে আপনারা জানতে চেয়েছেন আজকের এই পর্বে আমরা
সূর্যমুখী বীজের যাবতীয় অপকারিতা গুলো বিস্তারিতভাবে জেনে নেওয়ার চেষ্টা করবো
চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক সূর্যমুখী বীজ খাওয়ার ফলে বেশ কিছু ক্ষতি হয়ে
থাকে নিচের আলোচনায় সেগুলো তুলে ধরা হলোঃ
- সূর্যমুখী বীজে পর্যাপ্ত পরিমাণে ফসফরাস রয়েছে। যার কারণে এটি অতিরিক্ত খেলে কিডনির ক্ষতি হতে পারে। তাই এটি অতিরিক্ত খাওয়া থেকে বিরত থাকার চেষ্টা করতে হবে।
- সূর্যমুখী বীজ নিয়মিত আধা কাপ খাওয়া যেতে পারে। এর থেকে বেশি খাওয়ার চেষ্টা করবেন না। কেননা এর থেকে বেশি খেলে ওজন বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়।
- সূর্যমুখী বীজ প্রয়োজনের অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে বমি বমি ভাব হতে পারে, ডায়রিয়া হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়। এমনকি গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ব্যথা হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হতে দেখা যায়।
- সূর্যমুখী বীজ খাওয়ার ফলে যাদের এলার্জি সমস্যা হবে, তাদের এটি খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। কেননা তারা যদি এটি খায়, তাহলে তাদের ত্বকে ফুসকুড়ি, চুলকানি, শ্বাস নিতে অসুবিধা হওয়া, ফোলাভাব, ঠোঁট জ্বালাপোড়া করা ইত্যাদি নানা সমস্যা তৈরি হবে।
- সূর্যমুখী বীজে পর্যাপ্ত পরিমাণে সোডিয়াম রয়েছে। তাই এটি অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে শরীরে সোডিয়াম এর পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে রক্তচাপ বেড়ে যেতে পারে।
- সূর্যমুখী বীজ খাওয়ার ফলে লিভার ও কিডনির ক্ষতি হতে পারে। কেননা এতে রয়েছে ক্যাডমিয়াম নামক একটি ভারী ধাতু। যা কিডনি ও লিভারের ক্ষতি করে থাকে।
- সূর্যমুখী বীজ ভালোভাবে সংরক্ষণ করা উচিত। কেননা এটি ভালোভাবে সংরক্ষণ না করা হলে এতে সালমোনেল্লা ব্যাকটেরিয়া প্রবেশ করতে পারে। যা খেলে শরীরের জন্য ক্ষতি হতে পারে।
- অনেক সময় দেখা যায় সূর্যমুখী বীজ খাওয়ার ফলে মলত্যাগে বিঘ্ন ঘটছে। আর এমন সমস্যা তৈরি হলে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা তৈরি হতে দেখা যায়।
- বাজার থেকে কিনা সূর্যমুখী বীজে অতিরিক্ত লবণ থাকতে পারে। যা খাওয়ার ফলে শরীরের ক্ষতি হতে পারে।
- সূর্যমুখী বীজে ফাইবার থাকে। যার কারণে এটি অতিরিক্ত খেলে পেট ব্যথা বা গ্যাসের সমস্যা তৈরি হতে পারে।
- আরো সকল বীজের মতো সূর্যমুখী বীজেও ফাইটিক এসিড রয়েছে। যার কারণে এটি ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন সহ আরও নানা খনিজ পদার্থকে সহজে শোষণ হতে বাধা প্রদান করে থাকে।
- সূর্যমুখী বীজ চিবিয়ে খাওয়ার ফলে দাঁতের উপর রুক্ষতা তৈরি হয়। যার ফলে এটি দাঁতের এনামেল ক্ষয় করতে পারে। এমনকি এটি খাওয়ার ফলে দাঁত ফেটে যেতে পারে। এই সমস্যাগুলো প্রতিরোধে খোসা ছাড়া সূর্যমুখী বীজ খাওয়ার চেষ্টা করুন।
আরো পড়ুনঃ কালোজিরা চিবিয়ে খাওয়ার ১৯টি উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানুন
গর্ভাবস্থায় সূর্যমুখী বীজ খাওয়ার উপকারিতা
গর্ভাবস্থায় সূর্যমুখী বীজ খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আপনারা জানতে চেয়েছেন।
আজকের এই পর্বে আমরা গর্ভকালীন সময়ে সূর্যমুখী বীজ খাওয়ার ফলে কি কি ধরনের
উপকারিতা পাওয়া যায় তা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়ার চেষ্টা করবো। চলুন
তাহলে জেনে নেওয়া যাক। গর্ভকালীন সময়ে সূর্যমুখী বীজ খাওয়ার ফলে বেশ কিছু
উপকার পাওয়া যায়। নিচের আলোচনায় তা দেখানো হলোঃ
- সূর্যমুখী বীজ ফলিক এসিড সমৃদ্ধ। যার কারণে এই বীজ খাওয়া সুস্থ গর্ভধারণের জন্য অত্যন্ত উপকারি। পাশাপাশি এটি ফাইবার সমৃদ্ধ হওয়ার কারণে গর্ভকালীন সময়ে খেলে হজম প্রক্রিয়া ভালো হয়।
- সূর্যমুখী বীজে ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিড রয়েছে। যার কারণে গর্ভকালীন সময়ে সূর্যমুখী বীজ খাওয়ার ফলে শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশ বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। পাশাপাশি এটি শিশুর বিকাশের প্রথম পর্যায়ে কেন্দ্রীয় স্নায়ুকে সহায়তা করে থাকে।
- গর্ভকালীন সময়ে সূর্যমুখী বীজ খাওয়ার ফলে এতে থাকা প্রোটিন এবং ভিটামিন পাওয়া যায়। যা এই সময় খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
- গর্ভকালীন সময়ে সূর্যমুখী বীজ খাওয়ার ফলে শরীরের আমূল পরিবর্তন ঘটে থাকে। পাশাপাশি এটি শিরাতে রক্ত জমাট বাঁধা বন্ধ করে থাকে
- সূর্যমুখী বীজ গর্ভকালীন সময়ে খাওয়ার ফলে এতে থাকা পর্যাপ্ত পরিমাণে পটাশিয়াম পাওয়া যায়। যা সোডিয়াম এর ভারসাম্য বজায় রেখে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে ভূমিকা রাখে।
- সূর্যমুখী বীজে ফসফরাস রয়েছে। যার কারণে এটি গর্ভকালীন সময়ে খাওয়ার ফলে হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো থাকে। পাশাপাশি এটি হৃদরোগের ঝুঁকি থেকেও রক্ষা করে।
- সূর্যমুখী বীজ ফোলেট সমৃদ্ধ। যার কারণে এটি গর্ভকালীন সময়ে খাওয়ার ফলে ভ্রুনের বিকাশে সহায়তা করে থাকে। এটি এ সময় পর্যাপ্ত পরিমাণে গ্রহণ করলে নিউরাল টিউবের ত্রুটি প্রতিরোধ হয়ে থাকে। পাশাপাশি এটি শিশুর স্নায়ুতন্ত্রের সুস্থ বিকাশে সহায়তা করে থাকে।
- গর্ভকালীন সময়ে সূর্যমুখী বীজ খাওয়ার ফলে রক্তস্বল্পতা দূর হয়ে থাকে। কেননা এতে রয়েছে আইরন। যা রক্তস্বল্পতা দূর করার কাজে ভূমিকা রাখে। পাশাপাশি এটি আয়রন লোহিত রক্তকণিকা উৎপাদনে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে। একই সঙ্গে এটি মা ও শিশুর জন্য অক্সিজেন সরবরাহ করে থাকে।
- গর্ভকালীন সময়ে সূর্যমুখী বীজ খাওয়ার ফলে এতে থাকা স্বাস্থ্যকার চর্বি এবং প্রোটিন শরীরের ক্লান্তি দূর করতে সহায়তা করে থাকে। পাশাপাশি এটি সারাদিনের জন্য শরীরের শক্তি ধরে রাখতে সাহায্য করে।
- সূর্যমুখী বীজে ওমেগা-৩ এবং ওমেগা-৬ ফাটি আসিড রয়েছে। যার কারণে গর্ভকালীন সময়ে সূর্যমুখী বীজ খাওয়ার ফলে মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়। একই সঙ্গে এটি নবাগত শিশুর ত্বকের স্বাস্থ্য এবং চোখের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
- সূর্যমুখী বীজে ফাইটোকেমিক্যাল রয়েছে। যা গর্ভকালীন সময়ে খাওয়ার ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। পাশাপাশি এটি গর্ভকালীন সময়ে শরীর দুর্বল হয়ে যাওয়ার সমস্যা প্রতিরোধ করে থাকে। তাছাড়াও এটি শরীরের ক্রমবর্ধমান ভ্রুণকে গ্রহণ করার শক্তি যোগিয়ে থাকে।
গর্ভকালীন সময়ে সূর্যমুখী বীজ খাওয়ার পদ্ধতিঃ
- গর্ভকালীন সময়ে সূর্যমুখী বীজ কাঁচা খাওয়া যেতে পারে। এমনকি আপনারা চাইলে এটিকে চুলায় ভালোভাবে ভেজেও খেয়ে নিতে পারেন।
- সূর্যমুখী বীজ গর্ভকালীন সময়ে রান্না করে খাওয়া যেতে পারে। এটিকে রান্না করার সময় পানিসূন্য অথবা ভেজা অবস্থায় রান্না করে খেতে হবে।
- গর্ভকালীন সময়ে সূর্যমুখী বীজ শুকনো ফল বা অন্যান্য যে কোন ফলের সাথে সকালের নাস্তায় খাওয়া যেতে পারে।
- আপনার পছন্দমতো সালাদে সূর্যমুখী বীজ যোগ করে খেতে পারেন। এমনকি আপনি ফল বা সবজির সালাদের সাথেও সূর্যমুখী বীজ যোগ করে খেতে পারেন।
- স্মুদিকে আরো পুষ্টিকর করার জন্য এর সাথে এক চামচ পরিমাণ সূর্যমুখী বীজ মিশিয়ে খেয়ে নিতে পারেন।
- মাফিন কুকি রুটি তৈরি করার সময় এর সাথে সূর্যমুখী বীজ যোগ করে দিন। এটি সুস্বাদু স্বাদ আনতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকবে।
- প্যানকেক কিংবা ওটমিলের সাথে সূর্যমুখী বীজের গুঁড়া যোগ করে সকালের নাস্তায় খাওয়া যেতে পারে।
গর্ভকালীন সময়ে সূর্যমুখী বীজ খাওয়ার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াঃ
- গর্ভকালীন সময়ে সূর্যমুখী বীজ বেশি খাওয়ার ফলে এটা থাকা ফসফরাস কিডনির ক্ষতি করতে পারে। তাই এই সময় এটি অতিরিক্ত খাওয়ার চেষ্টা করবেন না।
- সূর্যমুখী বীজ দাঁত দিয়ে খোসা ছাড়িয়ে খেতে হয়। তাই এই সময় বারবার দাঁত দিয়ে সূর্যমুখী বীজ খোসা ছাড়িয়ে খাওয়ার ফলে দাঁতের ফেটে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
- মুদির দোকান থেকে কেনা সূর্যমুখী বীজে নানা রকম ব্যাকটেরিয়া থাকতে পারে। যা গর্ভকালীন সময়ে খাওয়ার ফলে ক্ষতি হতে পারে।
- সূর্যমুখী বীজ খাওয়ার ফলে এলার্জির ঝুঁকি থাকে। তাই গর্ভকালীন সময়ে যে সকল মায়েদের আগে থেকেই এলার্জির সমস্যা রয়েছে, তাদের এটি না খাওয়াই ভালো হবে। এছাড়াও আপনারা উপরের আলোচনা থেকে সূর্যমুখী বীজ খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জেনে আসতে পারেন।
সূর্যমুখী বীজের পুষ্টিগুণ
সূর্যমুখী বীজের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে আপনাদের বিস্তারিত জেনে নেওয়া প্রয়োজন।
কেননা সূর্যমুখী বীজের এমন সকল পুষ্টিগুণ রয়েছে যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য
অত্যন্ত কার্যকরী। তাই আজকের এই পর্বে আমরা সূর্যমুখী বীজের যাবতীয় পুষ্টিগুণ
সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়ার চেষ্টা করবো। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক।
- সূর্যমুখী বীজে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন, জিংক, ফসফরাস, দস্তা, সেলেনিয়াম, লোহা, তামা পটাশিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, সোডিয়াম ইত্যাদি নানা খনিজ উপাদান রয়েছে।
- সূর্যমুখী বীজে থাকা প্রোটিন উপাদান আমাদের শরীরের পেসি গঠন করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই আমাদের খাদ্য তালিকায় সূর্যমুখী বীজ যোগ করা অতীবও প্রয়োজন।
- সূর্যমুখী বীজকে পুষ্টির সুসংগঠিত প্যাকেজ হিসেবে ধরা হয়। কেননা সূর্যমুখী বীজ থেকেই প্রয়োজনীয় পরিমাণ ভিটামিন, খনিজ এবং স্বাস্থ্যকার চর্বি পাওয়া যায়। যা আমাদের শরীরের নানা সমস্যায় কাজে লাগে।
- সূর্যমুখী বীজ পুষ্টিগুণে ভরপুর হলেও এতে পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালরি রয়েছে। তাই এটি একবারে এক চতুর্থাংশ কাপ গ্রহন করা যেতে পারে।
- এক চতুরাংশ কাপ সূর্যমুখী বীজ থেকে ১৯ গ্রামের বেশি চর্বি পাওয়া যায়। যা আপনার স্বাস্থ্যের জন্য বেশির ভাগই ভালো।
- ১/৪ কাপ সূর্যমুখী বীজ খাওয়ার ফলে এখান থেকে ৬ গ্রাম প্রোটিন পাওয়া যায়।
- সূর্যমুখী বীজ খাওয়ার ফলে এতে থাকা ফেনোলিক এসিডের মত যৌগ এবং ফ্যাভোনয়েড শরীরে পাওয়া যায়। যা মূলত একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট।
- সূর্যমুখী বীজে রয়েছে থায়ামিন, নিয়াসিন, কোলিন, ভিটামিন বি৬, ফোলেট, ভিটামিন সি, ভিটামিন ই, রিবোফ্লাভিন, প্যানথোথেনিক অ্যাসিড সহ আরো নানা গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টিগুণ। এ সকল পুষ্টি উপাদান গুলো স্নায়ুতন্ত্রকে সুস্থ রাখতে এবং শক্তি উৎপাদন করতে সহায়তা করে থাকে।
- সূর্যমুখী বীজে থাকা ভিটামিন ই, ফোলেট, জিংক, সেলেনিয়াম, আমাদের শরীরের কোষগুলোকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে থাকে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে থাকে, ডিএনএ ও প্রোটিন উৎপাদনে সাহায্য করে এবং লোহিত রক্ত কণিকা তৈরিতে কাজ করে থাকে।
আরো পড়ুনঃ মৌরি খাওয়ার ১৯টি উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন
পুরুষদের জন্য সূর্যমুখী বীজের উপকারিতা
পুরুষদের জন্য সূর্যমুখী বীজের উপকারিতা সম্পর্কে আপনাদের জেনে নেওয়া
প্রয়োজন। কেননা সূর্যমুখী বীজ পুরুষদের শরীরের নানা গুরুত্বপূর্ণ উপকার করে
থাকে। আজকের এই পর্বে আমরা পুরুষদের জন্য সূর্যমুখী বীজ খাওয়ার ফলে কি কি
ধরনের উপকার পাওয়া যায়। সেই সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়ার চেষ্টা করবো।
চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক।
- পুরুষদের পর্যাপ্ত পরিমাণে সূর্যমুখী বীজ খাওয়া প্রয়োজন। কেননা এতে থাকা ভিটামিন ই পুরুষদের পোস্টেট স্বাস্থ্যের উন্নতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। একই সঙ্গে এটি পোস্টেট ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে থাকে। তাই পুরুষদের খাদ্য তালিকায় সূর্যমুখী বীজ রাখা প্রয়োজন।
- যে সকল পুরুষরা নিয়মিত ব্যায়াম করেন, তাদের পেশির শক্তি বজায় রাখা অনেক বেশি জরুরী। সূর্যমুখী বীজে থাকা ম্যাগনেসিয়াম পেশির কার্যক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। পাশাপাশি এটি পেসির সংকোচন ও শিথিলীকরণে সহায়তা করে থাকে। এমনকি এটি পেসির ব্যথা কমাতেও সাহায্য করে।
- সূর্যমুখী বীজ নানা পুষ্টিগুণে ভরপুর। যার কারণে পুরুষরা যদি সূর্যমুখী বীজ খায়, তাহলে তাদের মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। পাশাপাশি এতে থাকা ফোলেট পুরুষদের মেজাজ ও জ্ঞানীয় কার্যক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে থাকে।
- সূর্যমুখী বীজে থাকা জিংক নামক উপাদান পুরুষদের হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এই উপাদান পুরুষদের টেস্টোস্টোরন হরমোন উৎপাদন এবং প্রজনন স্বাস্থ্য বজায় রাখার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
- পুরুষদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সূর্যমুখী বীজ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে। কেননা এতে রয়েছে সেলিনিয়াম নামক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করার কাজে সহায়তা করে থাকে।
- সূর্যমুখী বীজ পুরুষদের ওজন নিয়ন্ত্রণ রাখতে সহায়তা করে থাকে। কেননা এতে রয়েছে ফাইবার নামক উপাদান। এই উপাদানটি দীর্ঘক্ষণ যাবৎ পেট ভরা রাখতে সহায়তা করে থাকে। যার কারণে ক্ষুধার পরিমাণ কম লাগে। আর এর ফলে ওজন নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হয়।
- সূর্যমুখী বীজে পর্যাপ্ত পরিমাণে চর্বি থাকে। বিশেষ করে এতে লিনোলিক এসিড রয়েছে। যা পুরুষদের রক্তের খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সহায়তা করে থাকে এবং ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে। পাশাপাশি এতে থাকা ম্যাগনেসিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। যা হৃদযন্ত্রকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে।
- সূর্যমুখী বীজ মূলত ফসফরাস, তামা এবং ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ। যার কারণে পুরুষরা যদি এই বীজটি খাই, তবে তাদের হাড়ের স্বাস্থ্য সঠিকভাবে বজায় থাকবে। এছাড়াও আপনারা উপরের আলোচনা থেকে সূর্যমুখী বীজ খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জেনে আসতে পারেন।
আরো পড়ুনঃ মিষ্টি কুমড়ার বিচির ১৩টি উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানুন
সূর্যমুখী বীজের পুষ্টি উপাদান
সূর্যমুখী বীজের পুষ্টি উপাদান সম্পর্কে আপনাদের ভালোভাবে জেনে নেওয়া
প্রয়োজন। কেননা সূর্যমুখী বীজের পুষ্টি উপাদান গুলো শরীরের নানা গুরুত্বপূর্ণ
কাজে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে। আজকের এই পর্বে আমরা সূর্যমুখী বীজের
যাবতীয় পুষ্টি উপাদানের পরিমাণ বিস্তারিতভাবে জেনে নেয়ার চেষ্টা করবো। চলুন
তাহলে জেনে নেওয়া যাক।
প্রতি ১০০ গ্রাম সূর্যমুখী বীজে রয়েছে
পুষ্টি উপাদান | পরিমাণ |
---|---|
ক্যালোরি | ৫৮৪ কিলোক্যালোরি |
ফসফরাস | ৬৬০ মিলিগ্রাম |
প্রোটিন | ২০.৮ গ্রাম |
লোহা | ৫.৩ মিলিগ্রাম |
কার্বোহাইড্রেট | ২০ গ্রাম |
দস্তা | ৫ মিলিগ্রাম |
ফাইবার | ৮.৬ গ্রাম |
ম্যাগনেসিয়াম | ৩২৫ মিলিগ্রাম |
ভিটামিন-ই | ৩৫.১ মিলিগ্রাম |
চর্বি | ৫১.৫ গ্রাম |
সোডিয়াম | ৯ মিলিগ্রাম |
পটাসিয়াম | ৬৪৫ মিলিগ্রাম |
চিনি | ২.৬ গ্রাম |
ভিটামিন বি-১ | ১.৪৮ মিলিগ্রাম |
ভিটামিন বি-৫ | ৬.৭৫ মিলিগ্রাম |
ভিটামিন বি-৬ | ১.৩৪ মিলিগ্রাম |
ফোলেট | ২২৭ মাইক্রোগ্রাম |
কপার | ১.৮ মিলিগ্রাম |
আইরন | ৫.২৫ মিলিগ্রাম |
জিংক | ৫ মিলিগ্রাম |
সেলেনিয়াম | ৫৩ মাইক্রোগ্রাম |
ম্যাঙ্গানিজ | ১.৯৫ মিলিগ্রাম |
ত্বকের জন্য সূর্যমুখী বীজের উপকারিতা
ত্বকের জন্য সূর্যমুখী বীজের উপকারিতা সম্পর্কে আপনারা জানতে চেয়েছেন। আজকের
এই পর্বে আমরা সূর্যমুখী বীজ ত্বকের যত্নে কি ধরনের উপকারিতা বয়ে আনে তা
সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়ার চেষ্টা করবো। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক।
ত্বকের যত্নে সূর্যমুখী বীজের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপকারিত রয়েছে। নিচের
আলোচনায় তা দেখানো হলোঃ
- সূর্যমুখী বীজে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন এবং খনিজ সহ নানা পুষ্টি উপাদান রয়েছে। যা ত্বকের সামগ্রিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
- সূর্যমুখী বীজে রয়েছে ভিটামিন ই। এই উপাদানটি মূলত একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। যা ত্বককে ফ্রি র্যাডিক্যাল এর ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে ত্বকে বয়সের ছাপ পড়া প্রতিরোধ করে।
- সূর্যমুখী বীজের প্রদাহ বিরোধী গুণাবলী রয়েছে। যার কারণে এই বীজটি গ্রহণে ত্বকের জ্বালাপোড়া সহ আরো নানা সমস্যা প্রতিরোধ করে থাকে। পাশাপাশি এই গুণাবলীটি একজিমা, সোরিয়াসিস এবং ত্বকের ব্রণের মতো নানা সমস্যা প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে থাকে।
- ত্বকের যত্নে আপনি আপনার খাদ্য তালিকায় সূর্যমুখী বীজ যোগ করতে পারেন। কেননা এটি কোলাজেন উৎপাদনে সহায়তা করে থাকে। পাশাপাশি এই বীজটি আপনার ত্বককে শক্তিশালী এবং নমনীয় করে তুলতে সাহায্য করবে।
- সূর্যমুখী বীজ ওমেগা-৩ এবং ওমেগা-৬ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ। যার কারণে এই বীজটি গ্রহনে আপনার ত্বক স্বাস্থ্যসম্মত এবং আদ্র থাকবে। এর ফলে আপনার ত্বক নরম এবং উজ্জ্বলময় হবে। পাশাপাশি এটি আপনার ত্বককে শুষ্ক, খসখসে সমস্যা থেকে দূরে রাখবে।
- সূর্যমুখী বীজের আরো একটি গুণাবলী হলো এটি ত্বককে সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে রক্ষা করে থাকে। কেননা সূর্যমুখী বীজে রয়েছে বিটা ক্যারোটিন নামক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। যেটি ত্বককে সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে রক্ষা করতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে।
- সূর্যমুখী বীজে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকের যাবতীয় ক্ষতিকর দূষিত পদার্থ বের করে দিয়ে ত্বককে ভিতর থেকে পরিষ্কার করে তোলে। পাশাপাশি এটি ত্বকের ছিদ্রভাব দূর করে, ত্বকের যাবতীয় দূষণ রোধ করে এবং ত্বককে ঝলমলে করে তুলতে সাহায্য করে।
- সূর্যমুখী বীজ মূলত জিংক সমৃদ্ধ। যার কারণে এই বীজটি গ্রহণ করার ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। পাশাপাশি এটি ত্বকের যাবতীয় সংক্রমণ থেকে ত্বককে রক্ষা করে থাকে। একই সঙ্গে এটি ত্বককে বিভিন্ন প্রদাহের হাত থেকে মুক্ত করে থাকে।
- সূর্যমুখী বীজে সেলেনিয়াম নামক আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ খনিজ উপাদান রয়েছে। এই উপাদানটি ত্বককে সূর্যের রশ্মি থেকে রক্ষা করে, ত্বকে বয়সের ছাপ পড়া প্রতিরোধ করে, ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা বজায় রাখতে সহায়তা করে। আর এ সকল কারণে ত্বকের তারুণ্যের ছাপ বজায় থাকে।
- সূর্যমুখী বীজে ম্যাগনেসিয়াম নামক আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান রয়েছে। এই উপাদানটি ত্বকের আদ্রতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। পাশাপাশি এটি কোলাজেন এবং ইলাস্টিন এর মতো প্রোটিন উৎপাদনে সাহায্য করে থাকে।
আরো পড়ুনঃ গর্ভাবস্থায় চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জেনে নিন
সূর্যমুখী বীজ খাওয়ার পদ্ধতিঃ
সূর্যমুখী বীজ ত্বকের যত্নে আপনি আপনার দৈনন্দিন এর খাদ্য তালিকায় খুব সহজেই
যোগ করতে পারেন। এটি আপনারা সকালের নাস্তায় খেতে পারেন। তাছাড়াও আপনারা দই,
স্মুদি কিংবা সালাদ খাওয়ার সময় এর সাথে অল্প পরিমাণ সূর্যমুখী বীজ ছিটিয়ে
খেয়ে নিতে পারেন। এটি খাদতালিকায় রাখার ফলে আপনি যেমন একদিকে এটি খাওয়ার ফলে
সুস্বাদু স্বাদ উপভোগ করবেন। অন্যদিকে এটি ত্বকের যাবতীয় সমস্যা দূর করতে
যুগান্তকারী ভূমিকা রাখবে। এছাড়াও আপনারা উপরের আলোচনা
থেকে সূর্যমুখী বীজ খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জেনে আসতে
পারেন।
সূর্যমুখী বীজ সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর
প্রশ্নঃ সূর্যমুখী বীজ বপনের সময়?
উত্তরঃ সূর্যমুখী বীজ বপন করা হয় ভাদ্র ও আশ্বিন মাসে। ইংরেজি মাস
অনুযায়ী বলতে গেলে বলা যায় এটি সাধারণত আগস্ট মাসের মধ্য থেকে অক্টোবর মাসের
মধ্য সময় পর্যন্ত বপন করা যায়। এই সময়ের মধ্যে সূর্যমুখী বীজ লাগালে সবচাইতে
ভালো ফলন পাওয়া যায়।
প্রশ্নঃ সূর্যমুখী বীজে কোন কোন ভিটামিন রয়েছে?
উত্তরঃ সূর্যমুখী বীজে নানা ধরনের ভিটামিন রয়েছে। এ সকল ভিটামিন
গুলোর মধ্যে অন্যতম কিছু ভিটামিন হলো থায়ামিন, নিয়াসিন, ফোলেট, কোলিন, ভিটামিন
বি৬, ভিটামিন সি, ভিটামিন ই, রিবোফ্লাভিন, প্যানন্টোথেনিক এসিড
ইত্যাদি। এ সকল গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন গুলো সূর্যমুখী বীজে পাওয়া যায়।
প্রশ্নঃ সূর্যমুখী বীজ খেলে কি হিমোগ্লোবিন বাড়ে?
উত্তরঃ হ্যাঁ, সূর্যমুখী বীজ খাওয়ার ফলে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা
বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। কেননা এটি খাওয়ার ফলে এখান থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণে
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, খনিজ পদার্থ, ফাইবার এবং স্বাস্থ্যকার চর্বি পাওয়া যায়। যা
হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে থাকে।
প্রশ্নঃ দিনে কয়টি সূর্যমুখী বীজ খাওয়া উচিত?
উত্তরঃ নিয়মিত সূর্যমুখী বীজ খাওয়ার ফলে নানা ধরনের উপকারিতা হয়ে
থাকে। এ সকল উপকারিতা গুলো পাওয়ার জন্য নিয়মিত সূর্যমুখী বীজ ছোট একটি কাপের ১
কাপ পরিমান খাওয়া উচিত, অর্থাৎ ৩০ গ্রাম মতো। এর থেকে বেশি না খাওয়াই উত্তম
হবে।
প্রশ্নঃ সূর্যমুখী বীজের দাম কত?
উত্তরঃ সূর্যমুখী বীজের দাম একেক জায়গায় একেক রকম হয়ে থাকে। এর
দাম সাধারণত ৬৫০ টাকা থেকে ১৩০০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। অর্থাৎ ৫০০ গ্রাম
সূর্যমুখী বীজের দাম ৬৫০ টাকা এবং ১ কেজি সূর্যমুখী বীজের দাম ১৩০০ টাকা করে। এ
দামের মধ্যেই ভাল সূর্যমুখী বীজ পাওয়া যায়।
প্রশ্নঃ সূর্যমুখী বীজ খাওয়া কি ক্ষতিকর?
উত্তরঃ সূর্যমুখী বীজ খাওয়ার ফলে বেশ কিছু ক্ষতি হতে পারে। এ সকল
ক্ষতির মধ্যে অন্যতম একটি ক্ষতি হলো ওজন বৃদ্ধি হওয়া। অর্থাৎ সূর্যমুখী বীজ অধিক
ক্যালোরি সমৃদ্ধ। যার কারণে এটি অতিরিক্ত খেলে ওজন বেড়ে যেতে পারে। এছাড়াও
সূর্যমুখী বীজে অতিরিক্ত লবণ থাকলে রক্তচাপের পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে পারে। যেহেতু
এই বীজ ফাইবার সমৃদ্ধ। তাই এটি অতিরিক্ত গ্রহণ করলে হজমের সমস্যা তৈরি হতে পারে।
প্রশ্নঃ আমরা কি রাতে সূর্যমুখী বীজ খেতে পারি?
উত্তরঃ হ্যাঁ, রাতে সূর্যমুখী বীজ খাওয়া যেতে পারে। কেননা রাতে
সূর্যমুখী বীজ খাওয়ার ফলে এতে থাকা অ্যামিনো এসিড ট্রিপটোফ্যান পাওয়া
যায়। যা আপনাকে রাতে মানসিক চাপ থেকে রক্ষা করে থাকবে এবং আপনার মস্তিষ্কের
উদ্দীপকগুলোকে উদ্দীপিত করতে সহায়তা করবে। যা রাতে ভালো ঘুম হওয়ার জন্য অত্যন্ত
কার্যকরী।
প্রশ্নঃ সূর্যমুখী বীজ কি ত্বক পরিষ্কার করতে পারে?
উত্তরঃ হ্যাঁ, সূর্যমুখী বীজ ত্বক পরিষ্কার করার কাজে কার্যকরী
ভূমিকা পালন করে থাকে। এতে থাকা ভিটামিন ই বার্ধক্য প্রতিরোধ করতে সহায়তা
করে থাকে। পাশাপাশি এতে থাকা প্রয়োজনীয় খনিজ পদার্থ জিংক ও তামা ত্বকের ব্রণ
প্রতিরোধ করতে এবং কোলাজেন উৎপন্ন করতে সাহায্য করে থাকে।
প্রশ্নঃ সূর্যমুখী বীজ কাদের খাওয়া উচিত নয়?
উত্তরঃ যে সকল ব্যক্তিদের সূর্যমুখী বীজ খাওয়ার ফলে এলার্জির সমস্যা
তৈরি হয়, তাদের এই বীজ এড়িয়ে চলার চেষ্টা করতে হবে। কেননা এটি খাওয়ার ফলে
তাদের ক্ষেত্রে চুলকানি, জ্বালাপোড়া, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি নানা সমস্যা তৈরি হতে
পারে। এমনকি তীব্র অ্যানাফিল্যাক্সিসও দেখা দিতে পারে।
প্রশ্নঃ সূর্যমুখী বীজ কি খাওয়া যায়?
উত্তরঃ হ্যাঁ, সূর্যমুখী বীজ খাওয়া যায়। এটি খাওয়ার ফলে
স্বাস্থ্যের নানা উপকার হয়ে থাকে। এটি খাওয়ার ফলে এতে থাকা স্বাস্থ্যকর ফ্যাট
পাওয়া যায়। তাছাড়াও এটি পলি অ্যানস্যাচুরেটেড এবং মনো অ্যানস্যাচুরেটেড
চর্বি সমৃদ্ধ। যার কারণে এই ফ্যাট সমৃদ্ধ সূর্যমুখী বীজ খাওয়ার ফলে শরীরের
খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে যায়। যার দারুন হার্ট ভালো থাকে।
লেখকের শেষ কথা
উপরের আলোচনা থেকে আমরা সূর্যমুখী বীজ খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে
বিস্তারিত জেনে এসেছি। আমরা আরো জানতে সক্ষম হয়েছি সূর্যমুখী বীজ খাওয়ার
উপকারিতা সম্পর্কেও। সূর্যমুখী বীজ নানা পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ। এই বীজ খাওয়ার ফলে
আমাদের শরীরের নানা উপকার হয়ে থাকে। কিন্তু এটি কিভাবে খেলে আমাদের শরীরের উপকার
হয়ে থাকে তা হয়তো আমরা অনেকেই জানিনা।
আমি তাই উপরের আলোচনায় সূর্যমুখী বীজের যাবতীয় গুণাবলী এবং একই সঙ্গে এটি
কিভাবে খেলে উপকার পাওয়া যাবে, তার সম্পূর্ণ বর্ণনা বিস্তারিতভাবে আলোচনা করার
চেষ্টা করেছি। আশা করছি আপনারা যদি উপরের আলোচনাটি ভালোভাবে পড়ে থাকেন, তাহলে
অবশ্যই সূর্যমুখী বীজ খাওয়ার যাবতীয় নিয়মাবলী বিস্তারিতভাবে জেনে নিতে পারবেন।
রিটেক্স আইটি নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url