গর্ভাবস্থায় চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জেনে নিন
গর্ভাবস্থায় চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে আপনাদের বিস্তারিত জেনে
নেওয়া প্রয়োজন। কেননা গর্ভকালীন সময়ে চিয়া সিড খাওয়া অনেক বেশি নিরাপদ এবং
এটি এইসময় কিভাবে খেতে হবে তা জানা খুবই দরকার।
গর্ভাবস্থায় চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে নিচের
দেওয়া লেখাগুলো খুব যত্ন সহকারে পড়ার চেষ্টা করতে হবে। তাহলেই গর্ভকালীনসহ
অন্যান্য সময় চিয়া সিড খাওয়ার যাবতীয় গুণাবলী জানতে পারবেন।
সূচিপত্রঃ চিয়া সিড খাওয়ার যাবতীয় গুণাবলী সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন
- চিয়া সিড কি
- গর্ভাবস্থায় চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম
- চিয়া সিড খাওয়ার উপকারিতা
- চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম
- চিয়া সিড খাওয়ার অপকারিতা
- সকালে খালি পেটে চিয়া সিড খাওয়ার উপকারিতা
- চিয়া সিড এর পুষ্টিগুণ
- বাচ্চাদের জন্য চিয়া সিড এর উপকারিতা
- চিয়া সিড দিয়ে চুলের যত্ন
- চিয়া সিড দিয়ে রূপচর্চা
- চিয়া সিড সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর
- লেখকের শেষ কথা
চিয়া সিড কি
চিয়া সিড মূলত একটি গাছের নাম। এই গাছটি আমেরিকা ও মেক্সিকোতে হয়ে থাকে। এ
গাছের বীজকে চিয়া সিড বলা হয়ে থাকে। এ গাছের বীজ দেখতে অনেকটাই তিলের বীজের
মতো হয়ে থাকে। এই বীজটি প্রাচীন অ্যাজটেক জাতির দৈনন্দিন এর খাদ্য
তালিকায় যুক্ত থাকতো। এই বীজটি একটি শস্য জাতীয় উদ্ভিদ।
যে উদ্ভিদটি বেশিরভাগ সময় মরুভূমিতে জন্মিয়ে থাকে। এই বীজটি ব্যাপক
পরিমাণে পুষ্টিকর। যাতে পর্যাপ্ত পরিমাণে ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, ক্যালসিয়াম
এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। এই উপাদানগুলো শরীরকে শক্তি যোগানোর কাজে
সহায়তা করে থাকে। পাশাপাশি শরীরের অতিরিক্ত চর্বি কমিয়ে ওজন নিয়ন্ত্রণ করতেও
সাহায্য করে।
গর্ভাবস্থায় চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম
গর্ভাবস্থায় চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে আপনারা জানতে চেয়েছেন। আজকের এই পর্বে আমরা গর্ভকালীন সময়ে চিয়া সিড খেলে এর কি কি উপকারিতা পাওয়া যাবে এবং কিভাবে খেতে হবে তা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়ার চেষ্টা করবো। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক।
উপকারিতাঃ
- গর্ভকালীন সময়ে চিয়া সিড খাওয়ার ফলে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপকারিতা পাওয়া যায়। কেননা এতে রয়েছে ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিড, ক্যালসিয়াম, আয়রন, প্রোটিন, ফাইবার ইত্যাদি পুষ্টিকর উপাদান। এ সকল পুষ্টিকর উপাদান মা ও শিশুর জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
- গর্ভকালীন সময়ে চিয়া সিড খাওয়ার ফলে নবগত শিশুর মস্তিষ্ক ও চোখের উন্নতি হয়ে থাকে। কেননা এতে রয়েছে ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিড। তাছাড়াও এতে থাকা ফাইবার নামক উপাদান গর্ভকালীন সময়ে কোষ্ঠকাঠিন্যের হাত থেকে রক্ষা করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। ফলে হজম প্রক্রিয়া খুব দ্রুত সম্পন্ন হয়।
- গর্ভকালীন সময়ে সন্তানের বৃদ্ধি ও মানসিক স্বাস্থ্যের বিকাশে প্রোটিন খুবই গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। তাই গর্ভকালীন সময়ে চিয়া সিড খাওয়ার ফলে যথেষ্ট পরিমাণ প্রোটিন পাওয়া যায়। এজন্য আপনারা গর্ভকালীন সময়ে ডায়েটে চিয়া সিড রাখতে পারেন।
- গর্ভকালীন সময়ে শিশুর হাড় ও দাঁতের গঠনে ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার প্রয়োজন। আর এজন্য আপনি যদি এই সময় ডায়েটে চিয়া সিড রাখতে পারেন, তাহলে এখান থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণ ক্যালসিয়াম পেয়ে থাকবেন। যা ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণ করতে বিশেষ সহায়তা করে থাকবে।
- গর্ভকালীন সময়ে চিয়া সিড খাওয়ার ফলে গর্ভবতী মায়ের শক্তি বৃদ্ধি পায়। কেননা এতে রয়েছে ওমেগা ৩ ফ্যাটি আসিড এবং প্রোটিন। যা একজন গর্ভবতী মায়ের শক্তি বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে থাকে। গর্ভকালীন সময়ে রক্তস্বল্পতা দেখা দিতে পারে। সেজন্য ডায়েটে চিয়া সিড রাখা প্রয়োজন। এটি খাওয়ার ফলে এতে থাকা ক্যালসিয়াম ও আয়রন নামক উপাদান পাওয়া যায়। যা রক্তস্বল্পতা দূর করার কাজে সহায়তা করে।
- গর্ভকালীন সময়ে ডায়েটে চিয়া সিড রাখা প্রয়োজন। কেননা এতে রয়েছে ফাইবার নামক উপাদান। এই উপাদানটি রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। কেননা এই সময় রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে গেলে গর্ভপাতের ঝুকি থাকে। এমনকি এটি নবাগত শিশুর স্বাস্থ্যের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। তাই এই সময় চিয়া সিড খেতে পারেন। এটি খাওয়ার ফলে টাইপ ২ ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করা যায়।
খাওয়ার নিয়মঃ
- গর্ভকালীন সময়ে নিয়মিত ১ থেকে ২ চামচ চিয়া সিড খাওয়া যেতে পারে। তবে এটি বেশি পরিমাণে এই সময় খাওয়া ঠিক হবে না। এটি অতিরিক্ত খেলে পেট ফাঁপা, গ্যাস, এসিডিটি, বদ হজম ইত্যাদি নানান সমস্যা তৈরি হতে পারে। এছাড়াও এটি আগে না খেলে শুরুতে এটি অল্প অল্প করে খাওয়া উচিত।
- গর্ভকালীন সময়ে চিয়া সিড সহজে হজম করার জন্য ১ গ্লাস পানিতে ১ থেকে ২ চামচ চিয়া সিড মিস করে দিয়ে ১০ থেকে ১৫ মিনিট ভিজিয়ে রাখতে হবে। তারপর খেয়ে নিতে হবে। এছাড়াও এটি ফলের জুস, দই, দুধ ইত্যাদির সাথে মিস করেও খাওয়া যায়।
- গর্ভকালীন সময়ে সকালে নাস্তা করার সময় ওটমিল কিংবা সালাতের সাথে এটি মিস করে খাওয়া যেতে পারে। এভাবে খেলে সবচাইতে ভালো হয়। তাছাড়াও গর্ভকালীন সময়ে চিয়া সিড এর সাথে মধু ও লেবুর রস মিশিয়ে চা তৈরি করে খাওয়া যায়।
- গর্ভকালীন সময়ে রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে ১ গ্লাস পানিতে চিয়া সিড মিশিয়ে রেখে দিতে পারেন। তারপর সকালে উঠে চিয়া সিড ভিজিয়ে রাখা পানিসহ চিয়া সিড খেয়ে নিতে পারেন। তাছাড়াও এটি আপনারা কাঁচা অবস্থায় চিবিয়ে খেতে পারেন। এভাবে খেলেও এর উপকারিতা গুলো পাওয়া যায়।
- গর্ভকালীন সময়ে নিয়মিত ২৮ গ্রাম চিয়া সিড খাওয়া যেতে পারে। এই সময় এই পরিমাণই খাওয়া নিরাপদ। কেননা এই সময় এটি বেশি খেলে নানা রকম সমস্যা তৈরি হতে পারে। তাই নিয়মিত এটি সকালে খালি পেটে খাওয়া যেতে পারে। এর ফলে এর উপকারিতা গুলো পাওয়া যায়।
গর্ভকালীন সময়ে কাদের চিয়া সিড এড়িয়ে চলতে হবেঃ
- গর্ভকালীন সময়ে যে সকল মায়েদের পর্যাপ্ত পরিমাণে ফাইবার জনিত সমস্যা রয়েছে, তাদের এই সময় এটি খাওয়া নিরাপদ হবে না। কেননা তারা এই সময় এটি খেলে পেট ফাঁপা কিংবা গ্যাসের সমস্যা তৈরি হতে পারে। তাছাড়াও নিম্ন রক্তচাপের সমস্যা থাকলে এটি খাওয়া এই সময় নিরাপদ হবে না। কেননা এটি রক্তচাপ আরও কমিয়ে দিতে পারে।
- গর্ভকালীন সময়ে যে সকল মায়েদের চিয়া সিড খাওয়ার ফলে এলার্জি সমস্যা তৈরি হতে পারে, সে সকল মায়েদের এই সময় এটি খাওয়া নিরাপদ হবে না। কেননা এই সময় এটি খেলে ত্বকে চুলকানি, ফুসকুড়ি ইত্যাদি নানা সমস্যা তৈরি হতে পারে। এছাড়াও ডায়াবেটিসের সমস্যা থাকলে এটি খাওয়া নিরাপদ হবে না। কেননা এটি রক্তে শর্করার মাত্রা আরো কমিয়ে দিতে পারে।
- গর্ভকালীন সময়ে পেটের সমস্যা থাকলে চিয়া সিড এড়িয়ে চলতে পারেন। কেননা এই সময় এটি খাওয়ার ফলে পেটের নানা সমস্যা তৈরি হতে পারে। এতে পর্যাপ্ত পরিমাণে ফাইবার থাকায় ফাইবারের সমস্যা তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
চিয়া সিড খাওয়ার উপকারিতা
চিয়া সিড খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আপনারা জানতে চেয়েছেন। আজকের এই পর্বে
আমরা চিয়া সিড খাওয়ার ফলে কি কি উপকারিতা পাওয়া যায় তা সম্পর্কে
বিস্তারিত জেনে নেওয়ার চেষ্টা করবো। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক। চিয়া সিড
খাওয়ার ফলে বেশ কিছু উপকারিতা পাওয়া যায় নিচের আলোচনায় তা দেখানো
হলোঃ
- চিয়া সিড খাওয়ার ফলে আমাদের শরীরের হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো থাকে। কেননা চিয়া সিডে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং ফসফরাস। এই উপাদান গুলো আমাদের শরীরের হাড়কে শক্তিশালী করে তুলতে ভূমিকা রাখে। একই সঙ্গে এটি অস্ট্রিওপোরেসিস প্রতিরোধের ক্ষেত্রেও বিশেষ অবদান রাখে।
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করার জন্য চিয়া সিড বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। কেননা চিয়া সিড খাওয়ার ফলে এতে থাকা পর্যাপ্ত পরিমাণে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট পাওয়া যায়। যা শরীরকে বিভিন্ন সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করে থাকে।
- চিয়া সিড খাওয়ার ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। এমনকি এটি শরীর থেকে খারাপ কোলেস্টেরল দূর করতেও পারে। কেননা এতে রয়েছে সালমন মাছের চেয়ে ৮ গুণেরও বেশি ওমেগা ৩ ফ্যাটি আসিড। যা এ ধরনের সমস্যা থেকে মুক্তি দিয়ে থাকে।
- চিয়া সিড নানা পুষ্টিগুণে ভরপুর। এটি খাওয়ার ফলে ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, প্রোটিন, ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিড সহ আরো নানা গুরুত্বপূর্ণ খনিজ উপাদান পাওয়া যায়। যা শরীরকে সুস্থ রাখার কাজে সহায়তা করে থাকে।
- যারা শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে চান, তারা চাইলে চিয়া সিড খেতে পারেন। কেননা এটি খাওয়ার ফলে এতে থাকা উচ্চ ফাইবার ক্ষুদা নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে সহায়তা করে। পাশাপাশি এটি পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি শোষণ করে। ফলে পেট পরিপূর্ণ হয়ে যায়। যার দরুন শরীরে কম ক্যালোরি পাওয়া যায়। যা আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখবে।
- শরীরের নানা প্রদাহ কমানোর ক্ষেত্রে চিয়া সিড কাজ করে থাকে। কেননা এতে রয়েছে ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিড। যার প্রদাহ বিরোধী শক্তি রয়েছে। যার ফলে যে কোন ধরনের প্রদাহ নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে চিয়া সিড খেতে পারেন।
- চিয়া সিডে প্রোটিন নামক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান রয়েছে। যা পেশীর মেরামতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এমনকি এটি পেশীর বৃদ্ধিতেও দারুণ কাজ করে থাকে। যারা নিয়মিত খেলাধুলা করেন তাদের জন্য এটি বেশ উপকারী হবে।
- চিয়া সিড খাওয়ার ফলে অনেক চিকিৎসক মনে করেন খুব ভালো ঘুম হয়। সেই সাথে এটি খাওয়ার ফলে গ্যাসের সমস্যা প্রতিরোধ হয়ে থাকে। এমনকি এটি শরীরের নখ, চুল এবং ত্বকের উন্নতিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। পাশাপাশি এটি আমাদের শরীর থেকে যাবতীয় বর্জ্য পদার্থ বের করে দিতেও সহায়তা করে।
- হজমের সমস্যা দূর করার জন্য চিয়া সিড খাওয়া যেতে পারে। কেননা এটি ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার। আর ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার হওয়ার কারণে এটি খাওয়ার ফলে নিয়মিত মলতাগ হয়ে থাকে। পাশাপাশি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতেও এটি সহায়তা করে থাকে।
- চিয়া সিড খাওয়ার ফলে মলাসয় পরিষ্কার থাকে। যার ফলে কোলন ক্যান্সার হওয়ার আশঙ্কা থাকে না। পাশাপাশি এটি খাওয়ার ফলে হাঁটু ও জয়েন্টের ব্যথা ভালো হয়ে থাকে।
- যাদের ডায়াবেটিসের আশঙ্কা রয়েছে তারা চাইলে চিয়া সিড খাওয়ার চেষ্টা করতে পারেন। এটি খাওয়ার ফলে রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে থাকে। যা ডায়াবেটিস প্রতিরোধের ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
- চিয়া সিড মানবদেহের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। কেননা এটি খাওয়ার ফলে মুরগির ডিমের চেয়ে ৩ গুণ বেশি প্রোটিন পাওয়া যায়। যা মানবদেহকে সুস্থ রাখার কাজে সহায়তা করে থাকে।
- চিয়া সিড খাওয়ার ফলে এতে থাকা ম্যাগনেসিয়াম শরীরকে সিথিল করে রাখার কাজে সহায়তা করে। পাশাপাশি ট্রিপ্টোফ্যান নামক অ্যামিনো অ্যাসিড সেরোটোনিণে রুপান্তর হওয়ার কারণে খারাপ থাকা মেজাজ ভালো হয়ে যায়।
- চিয়া সিড খাওয়ার ফলে কাজে মনোযোগ বৃদ্ধি পায়। পাশাপাশি এটি মেধা শক্তি বিকশিত করার কাজেও সহায়তা করে থাকে। এমনকি এটি একাগ্রতা বজায় রাখার ক্ষেত্রেও কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে।
- চিয়া সিড ত্বকের যত্নে বিশেষ ভূমিকা পালন করতে পারে। এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকের বলিরেখা দূর করার কাজে সহায়তা করে। পাশাপাশি এতে থাকা অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি বৈশিষ্ট্য ত্বকের ব্রণের সমস্যা দূর করে থাকে। সেই সাথে এতে থাকা ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড ত্বককে হাইড্রেটেড রাখতে কাজ করে।
চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম
চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে আপনারা জানতে চেয়েছেন। আজকের এই পর্বে আমরা
চিয়া সিড খাওয়ার যাবতীয় নিয়মাবলী সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়ার চেষ্টা
করবো। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক। চিয়া সিড খাওয়ার বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ
উপকারিতা রয়েছে। এই উপকারিতা গুলো পাওয়ার জন্য চিয়া সিড নিয়ম মেনে খাওয়া
দরকার। নিচের আলোচনায় চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম দেওয়া হলোঃ
- সকালে খালি পেটে চিয়া সিড খেতে পারেন। এজন্য প্রথমে হালকা গরম এক গ্লাস পানিতে চিয়া সিড ১৫ থেকে ২০ মিনিট ভিজিয়ে রাখবেন। তারপর এই ভেজানো পানি খালিপেটে খেয়ে ফেলবেন। পাশাপাশি আপনারা রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগেও এভাবে চিয়া সিড খেতে পারেন।
- চিয়া সিড খেয়ে ওজন কমাতে চাইলে সকালে খালি পেটে এবং রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে ১ গ্লাস হালকা গরম পানিতে ২ চামচ চিয়া সিড এবং ২ চামচ লেবুর রস মিস করে খাওয়া যেতে পারে। এভাবে খেলে ওজন নিয়ন্ত্রণে আনা যায়।
- চিয়া সিড ওটস, জুস, কাস্টার্ড, ড্রিংকস, পুডিং এবং স্মুথির সাথে মিস করেও খাওয়া যায়। তাছাড়াও এটি রান্না করা সবজি, টক দই, সালাদ, সিরিয়াল ইত্যাদির ওপর দিয়েও খাওয়া যেতে পারে। এভাবে খাওয়ার ফলেও এর উপকারিতা গুলো পাওয়া যায়।
- নিয়মিত চিয়া সিড ১ থেকে ২ চামচ পরিমাণ খাওয়া যেতে পারে। তবে এর থেকে বেশি না খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে। কেননা এর থেকে বেশি খেলে পেটের নানা সমস্যা তৈরি হতে পারে।
- প্রথমে আপনারা ২ কাপ পরিমাণ নারিকেলের পানি নিন, আপনাদের পছন্দ মতো যে কোন একটি ফলের জুস নিন, ২ চামচ পরিমাণ চিয়া সিড নিন। এবার এই ৩টি উপকরণকে একসঙ্গে মিস করে ৩০ মিনিট রেখে দিন। তারপর খেয়ে নিন।
- ২ চামচ চিয়া সিড নিন, ১ কাপ দুধ নিন। তারপর ১ কাপ দুধে ২ চামচ চিয়া সিড মিস করে দিয়ে ২থেকে ৩ ঘন্টা রেখে দিন। এরপর এর সাথে ফলমূল যোগ করে খেয়ে নিতে পারেন। এটি শরীরে এনার্জি বৃদ্ধি করতে সহায়তা করবে।
চিয়া সিড খাওয়ার অপকারিতা
চিয়া সিড খাওয়ার অপকারিতা সম্পর্কে আপনারা জানতে চেয়েছেন। আজকের এই পর্বে
চিয়া সিড খাওয়ার ফলে কি কি ধরনের ক্ষতি হতে পারে তা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে
নেওয়ার চেষ্টা করবো। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক। চিয়া সিড খাওয়ার ফলে বেশ
কিছু ক্ষতি সাধন হয়ে থাকে। নিচে সেগুলো দেওয়া হলোঃ
- চিয়া সিড খাওয়া স্বাস্থ্যের পক্ষে বেশ উপকারি। তবে এটি অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। কেননা এটি অতিরিক্ত খেলে পোস্টেট ক্যান্সার বা স্তন ক্যান্সার হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এছাড়াও এটি অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে পেটের নানা সমস্যা দেখা যায়।
- ওজন নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষেত্রে বেশি পরিমাণে চিয়া সিড খাওয়া যাবে না। কেননা অতিরিক্ত পরিমাণে চিয়া সিড খাওয়ার ফলে ওজন অস্বাভাবিকভাবে আরো কমে যেতে পারে।
- রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষেত্রে চিয়া সিড বেশি পরিমাণে খাওয়া যাবে না। কেননা এটি অতিরিক্ত খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা অস্বাভাবিকভাবে আরো কমে যেতে পারে।
- চিয়া সিড ফাইবার সমৃদ্ধ একটি খাবার। তাই এটি অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়ার ফলে পেট ব্যথা, গ্যাস, ডায়রিয়া, কোষ্ঠ কাঠিন্য, বদ হজম ইত্যাদি নানা সমস্যা তৈরি হতে পারে।
- কিছু গবেষণায় দেখা গেছে চিয়া সিড খাওয়ার ফলে শরীরে পানির অভাব দেখা দিতে পারে। তাই এটি খাওয়ার সময় মাথায় রাখতে হবে যাতে প্রয়োজনীয় পরিমাণ নিয়মিত পানি খাওয়া হয়।
- যারা উচ্চ রক্তচাপের রোগী রয়েছেন, তারা হয়তো নিয়মিত উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ঔষধ সেবন করেন। তাই তাদের এই সময় চিয়া সিড খাওয়া নিরাপদ নয়। কেননা এই সময়ে এটি খেলে বিষক্রিয়া সৃষ্টি হতে পারে।
- চিয়া সিড খাওয়ার ফলে এক ধরনের প্রোটিন পাওয়া যায়। এই প্রোটিন আবার তিল বা সরিষায় দেখা যায়। তাই যাদের তিল বা সরিষায় অ্যালার্জি হয়, তাদের চিয়া সিড খাওয়া উচিত নয়। কেননা এটি খেলেও তাদের ক্ষেত্রে এলার্জি হতে পারে।
- যারা নিয়মিত রক্ত জমাট বাঁধার জন্য ওষুধ খাচ্ছেন, তাদের এই সময় চিয়া সিড খাওয়া উচিত নয়। কেননা এই ওষুধের সাথে চিয়া সিড খাওয়ার ফলে বিষক্রিয়া সৃষ্টি হতে পারে।
- গর্ভকালীন সময়ে চিয়া সিড খাওয়ার আগে ডাক্তারের কাছে ভালোভাবে এই সম্পর্কে জেনে নিতে হবে। তারপর যদি ডাক্তার খেতে বলে তাহলে খেতে হবে। আর খেতে না বললে তা এড়িয়ে চলতে হবে। এছাড়াও আপনারা চাইলে উপরের আলোচনা থেকে গর্ভাবস্থায় চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম এবং চিয়া সিড খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কেও বিস্তারিত জেনে আসতে পারেন।
সকালে খালি পেটে চিয়া সিড খাওয়ার উপকারিতা
সকালে খালি পেটে চিয়া সিড খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আপনারা জানতে চেয়েছেন।
আজকের এই পর্বে আমরা সকালে খালি পেটে চিয়া সিড খাওয়ার ফলে কি কি উপকারিতা
পাওয়া যেতে পারে তা সম্পর্কে জেনে নেওয়ার চেষ্টা করবো। চলুন তাহলে জেনে
নেওয়া যাক।
- সকালে খালি পেটে চিয়া সিড ভেজানো পানি খেতে পারেন। কেননা চিয়া সিড সহ ভেজানো পানি খেলে মেটাবলিজম বৃদ্ধি পায়। যার ফলে দীর্ঘক্ষণ যাবৎ পেট ভরা থাকে। আর পেট ভরা থাকলে ক্ষুধার পরিমাণ কম লাগে। ফলে খুব সহজেই ওজন নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
- চিয়া সিড রাতে ভিজিয়ে রেখে সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে স্মুদিতে মিস করে খেয়ে নিতে পারেন। এভাবে খাওয়ার ফলে শরীরকে ডিহাইড্রেটেড এর হাত থেকে রক্ষা করা সম্ভব হবে।
- চিয়া সিড ভেজানো পানিতে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, প্রোটিন, ম্যাগনেসিয়াম, ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিড, ক্যালসিয়াম, ফাইবার, কার্বোহাইড্রেট সহ আরো নানা খনিজ উপাদান। যার কারণে সকালে খালি পেটে চিয়া সিড ভেজানো জল খেলে সারাদিনের জন্য শরীরে এনার্জি পাওয়া যায়।
- চিয়া সিড ভেজানো জল খাওয়ার ফলে এতে থাকা সলিউয়েবল ফাইবার পাওয়া যায়। যার কারণে সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে চিয়া সিড ভেজানো জল খাওয়ার ফলে হজমের সমস্যা দূর হয়। আর হজমের সমস্যা দূর হলে কোষ্ঠকাঠিন্যের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
- চিয়া সিড ভেজানো জলে ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিড রয়েছে। যার কারণে সকালে খালি পেটে চিয়া সিড ভেজানো জল খেলে হৃদযন্ত্রকে সুস্থ রাখা সম্ভব হয়। যার ফলে শরীর থেকে খারাপ কোলেস্টেরল এর মাত্রা কমে যায়। পাশাপাশি হার্ট অ্যাটাক বা স্টক এর আশঙ্কা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
- সকালে খালি পেটে চিয়া সিড ভেজানো জল খাওয়ার ফলে এতে থাকা প্রোটিন ও ফাইবার একসাথে পাওয়া যায়। যার কারণে ব্লাড সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।
- রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে এক গ্লাস পানিতে চিয়া সিড ভিজিয়ে রেখে সকালে খালি পেটে এর সাথে মধু ও লেবুর রস মিস করে খাওয়ার ফলে শরীর থেকে যাবতীয় ধরনের ক্ষতিকর বর্জ্য পদার্থ বের করে দেওয়া যায়।
- চিয়া সিড ভেজানো জলে পর্যাপ্ত পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। যা সকালে খালি পেটে খাওয়ার ফলে শরীরের যাবতীয় প্রদাহজনিত সমস্যা দূর করতে সহায়তা করবে।
- গ্রীষ্মকালে পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘাম হলে কিংবা ঘুমানোর পরেও শরীরের ক্লান্তি দূর না হলে সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে চিয়া সিড ভেজানো জল খাওয়া যেতে পারে। এটি খাওয়ার ফলে শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে এনার্জি পাওয়া যাবে।
চিয়া সিড এর পুষ্টিগুণ
চিয়া সিড এর পুষ্টিগুণ সম্পর্কে আপনারা জানতে চেয়েছেন আজকের এই পর্বে আমরা
চিয়া সিড এর যাবতীয় পুষ্টিগুণ হলো আপনাদের জানিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবো চলুন
তাহলে জেনে নেওয়া যাক চিয়া সিড খাওয়ার ফলে নানা পুষ্টি উপাদান পাওয়া
যায় নিচের আলোচনায় সেগুলো দেখানো হলোঃ
- ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিড রয়েছে স্যামন মাছের চেয়ে ৮ গুণ বেশি
- ক্যালসিয়াম রয়েছে দুধের চেয়ে ৫ গুণ বেশি
- ভিটামিন সি রয়েছে কমলার চেয়ে ৭ গুণ বেশি
- প্রোটিন রয়েছে মুরগির ডিমের চেয়ে ৩ গুণ বেশি
- পটাশিয়াম রয়েছে কলার চেয়ে ২ গুণ বেশি
- আইরন রয়েছে পালং শাকের চেয়ে ৩ গুণ বেশি
পুষ্টি উপাদান | পরিমান |
---|---|
ম্যাগনেসিয়াম | ৩৩৫ মিলিগ্রাম |
জিংক | ৪.৬ মিলিগ্রাম |
ক্যালসিয়াম | ৬৩১ মিলিগ্রাম |
লৌহ | ৭.৭ মিলিগ্রাম |
ম্যাঙ্গানিজ | ২.৭২ মিলিগ্রাম |
ফসফরাস | ৮৬০ মিলিগ্রাম |
পটাশিয়াম | ৪০৭ মিলিগ্রাম |
ভিটামিন সি | ১.৬ মিলিগ্রাম |
ভিটামিন ই | ০.৫ মিলিগ্রাম |
পানি | ৫.৮ গ্রাম |
প্রোটিন | ১৬.৫ গ্রাম |
শর্করা | ৪২.১ গ্রাম |
শক্তি | ৪৮৬ কিলোক্যালরি |
ফ্যাট | ৩৪.৪ গ্রাম |
কার্বোহাইড্রেট | ৩৪.৪ গ্রাম |
ফাইবার | ৩৪.৪ গ্রাম |
ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিড | ১৭.৮ গ্রাম |
ভিটামিন কে | ১.২ মাক্রোগ্রাম |
ফোলেট | ৪০ মাইক্রোগ্রাম |
দস্তা | ৩.৬ মিলিগ্রাম |
বাচ্চাদের জন্য চিয়া সিড এর উপকারিতা
বাচ্চাদের জন্য চিয়া সিড এর উপকারিতা সম্পর্কে আপনাদের জেনে নেওয়া প্রয়োজন।
কেননা চিয়া সিড বাচ্চাদের জন্য দারুন কার্যকরী। আজকের এই পর্বে আমরা চিয়া সিড
বাচ্চাদের জন্য কি কি উপকারিতা বয়ে আনে তা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়ার
চেষ্টা করবো। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক।
- চিয়া সিড খাওয়ার ফলে বাচ্চাদের ব্রেনের বিকাশ ও বৃদ্ধি সাধিত হয়ে থাকে। কেননা চিয়া সিডে রয়েছে ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড। যা বাচ্চাদের ব্রেনকে সক্রিয় করে তুলতে সাহায্য করে।
- বাচ্চাদের কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার ক্ষেত্রে চিয়া সিড গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। কেননা চিয়া সিডে রয়েছে সলিউবল ফাইবার। এই উপাদানটি বাচ্চাদের পায়খানা পরিষ্কার হতে সহায়তা করে।
- বাচ্চাদের শরীরের পেশী গঠনে এবং ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধিতে চিয়া সিড কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে। কেননা চিয়া সিড ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, জিংক ইত্যাদি নানা খনিজ উপাদান সমৃদ্ধ। যা বাচ্চাদের এই ধরনের উপকারে সহায়তা করে।
- বাচ্চাদের হজম শক্তি সহজ করতে, দেহের শক্তি বাড়াতে, মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়াতে, রুচি বাড়াতে, এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করার ক্ষেত্রে চিয়া সিড গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এছাড়াও আপনারা চাইলে উপরের আলোচনা থেকে গর্ভাবস্থায় চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে আসতে পারেন।
বাচ্চাদের চিয়া সিড খাওয়ানোর পদ্ধতিঃ
- চিয়া সিড দুধের সাথে মিশিয়ে কিংবা পানিতে মিশিয়ে বাচ্চাদের খাওয়ানো যেতে পারে।
- চিয়া সিড দইয়ের সাথে মিশিয়ে কিংবা ওটমিলের সাথে মিশিয়ে বাচ্চাদের খাওয়ানো যেতে পারে।
- চিয়া সিড খিচুড়ির সাথে মিশিয়ে কিংবা সেরেলাক এর সাথে মিশিয়ে বাচ্চাদের খাওয়ানো যেতে পারে।
- চিয়া সিড ফলের রসের সাথে কিংবা শরবতের সাথে মিশিয়ে বাচ্চাদের খাওয়ানো যেতে পারে।
- চিয়া সিড বাচ্চাদের নুডুলস কিংবা স্যুপের সাথে মিশিয়ে খাওয়ানো যেতে পারে।
- চিয়া সিড বাচ্চাদের সুজির সাথে মিশিয়ে কিংবা সাঙ্গুর সাথে মিশিয়ে খাওয়ানো যেতে পারে।
চিয়া সিড দিয়ে চুলের যত্ন
চিয়া সিড দিয়ে চুলের যত্ন কিভাবে নিতে হয় তা সম্পর্কে আপনারা জানতে
চেয়েছেন। আজকের এই পর্বে আমরা চিয়া সিডকে কাজে লাগিয়ে চুলের যত্ন নেওয়ার
যাবতীয় নিয়মাবলী বিস্তারিত জানিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবো। চলুন তাহলে জেনে
নেওয়া যাক। চিয়া সিডকে কাজে লাগিয়ে বাড়িতেই বসেই দুর্দান্ত হেয়ার প্যাক
তৈরি করে নেওয়া যায়। যা চুলের যত্নে বিশেষ কার্যকরী ভূমিকা রাখে। চলুন সেই
হেয়ার প্যাক গুলো দেখে নেই।
১ম হেয়ার প্যাকঃ
- এজন্য প্রথমে আপনারা একটি প্যান নিয়ে তাতে হালকা জল দিয়ে হালকা জাল দিয়ে ফুটাতে থাকুন। তারপর এতে চাল ধোয়া পানি যোগ করে ফেলুন। কিছুক্ষণ এভাবে এই দুইটি উপকরণ জাল দিতে থাকুন। তারপর এগুলোতে নতুন করে ৩ চামচ চিয়া সিড ১ চামচ ভিটামিন ই অয়েল মিশিয়ে দিন। এরপর এই সবগুলো উপকরণকে বেশ কিছুক্ষণ জাল দিয়ে ঢাকনা দিয়ে ঢেকে দিন। তারপর যখন দেখবেন এই মিশ্রণটি ঠান্ডা হয়ে ঘন আকার ধারণ করেছে তখন তা ছ্যাঁকনির সাহায্যে ছেঁকে নিবেন। তারপর অন্য একটি পাত্র নিয়ে তাতে রেখে দিবেন। তাহলেই হয়ে গেল চিয়া সিড দিয়ে চুলের যত্নে হেয়ার প্যাক।
- এবার আপনারা চুলে এই প্যাকটি ব্যবহার করার আগে চুলকে কয়েক ভাগে ভাগ করে নিবেন। তারপর চুলে পানি স্প্রে করে এই হেয়ার প্যাকটি প্রথমে চুলের গোড়ায় তারপর চুলে ভালোভাবে লাগিয়ে দিবেন। এরপর ১ ঘন্টা এভাবে রেখে শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলবেন। এই হেয়ার প্যাকটি ব্যবহারে চুলের নানা উপকার সাধিত হয়ে থাকবে।
২য় হেয়ার প্যাকঃ
- এজন্য প্রথমে আপনাদের ১ চামচ চিয়া সিড নিতে হবে, নিতে হবে ২ চামচ হালকা গরম নারিকেল তেল। এরপর এই দুইটি উপকরণকে একসঙ্গে মিস করে মাথার স্কাল্পে লাগিয়ে দিন। ১ ঘন্টা মতো লাগিয়ে রেখে মাইল্ড শ্যাম্পু ব্যবহার করে তা ধুয়ে ফেলবেন। এই হেয়ার প্যাকটি ব্যবহার করার ফলে এটি আপনার চুলকে সঠিকভাবে পুষ্টি যোগিয়ে চুলের শুষ্ক ও ভঙ্গুর ভাব দূর করবে।
৩য় হেয়ার প্যাকঃ
- এজন্য প্রথমে আপনাদের নারিকেল তেল নিতে হবে, চিয়া সিড নিতে হবে, অলিভ অয়েল নিতে হবে। এরপর এই তিনটি উপকরণকে একসঙ্গে মিস করে এই তেল চুলের গোড়ায় ভালোভাবে লাগাতে হবে। এই হেয়ার প্যাকটি ব্যবহারে চুলের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত হবে। একই সঙ্গে চুলের পাক ধরার সমস্যা প্রতিরোধ হবে। মাথার ত্বকে রক্ত সঞ্চালন সঠিকভাবে হবে এবং চুলকে গোড়া থেকে পুষ্টি জোগাবে।
৪র্থ হেয়ার প্যাকঃ
- এজন্য প্রথমে আপনাদের এক গ্লাস পানিতে ১ চামচ চিয়া সিড ভিজিয়ে রাখতে হবে। ভিজিয়ে রাখার পর এটি যখন জেলের আকার ধারণ করবে তখন এতে ৬ চামচ নারিকেল তেল দিতে হবে। আরো দিতে হবে ২ চামচ আপেল সিডার ভিনেগার এবং সর্বশেষ এতে কিছু পরিমাণ মধু দিয়ে দিতে হবে। তারপর এই পুরো মিশ্রণটিকে মাইক্রোওয়েভে ৩০ সেকেন্ড মতো রেখে দিয়ে গরম করে নিতে হবে। এরপর এটি যখন স্বাভাবিক তাপমাত্রায় চলে আসবে, তখন এটি চুলে লাগিয়ে ১০ থেকে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে। তারপর শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলতে হবে। এই হেয়ার প্যাকটি সপ্তাহে ১ দিন ব্যবহার করা যেতে পারে।
চিয়া সিড দিয়ে রূপচর্চা
চিয়া সিড দিয়ে রূপচর্চা সম্পর্কে আপনারা জানতে চেয়েছেন। আজকের এই পর্বে আমরা
চিয়া সিড ব্যবহার করে ত্বকের কিভাবে যত্ন নেওয়া যায় তা সম্পর্কে বিস্তারিত
জেনে নেওয়ার চেষ্টা করবো। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক।
১ম ফেস প্যাকঃ
- এজন্য প্রথমে আপনাদের ১ গ্লাস পানিতে চিয়া সিড সারারাত ধরে ভিজিয়ে রাখতে হবে। তারপর সকালে এটি যখন জেলির মতো দেখাবে তখন এটি ত্বকে ভালোভাবে লাগিয়ে দিতে হবে। এই ফেসপ্যাকটি ব্যবহারে ত্বকের শুষ্ক ভাব দূর হবে। এছাড়াও এই প্যাকটি ব্যবহারে ত্বক ভিতর থেকে সতেজ ও উজ্জ্বলময় হয়ে উঠবে।
২য় ফেস প্যাকঃ
- এজন্য প্রথমে আপনাদের ১ গ্লাস পানিতে চিয়া সিড ভিজিয়ে রাখতে হবে। তারপর যখন এটি জেলির মতো হয়ে যাবে, তখন এতে অলিভ অয়েল মিশিয়ে দিতে হবে। আরও মিশাতে হবে ১ চামচ মধু। এরপর এই তিনটি উপকরণকে একসঙ্গে মিশিয়ে ফেসপ্যাক তৈরি করে নিন। তারপর এটি ত্বকে লাগিয়ে ২০ মিনিট অপেক্ষা করুন। শুকিয়ে গেলে হালকা গরম পানি দিয়ে তা ধুয়ে ফেলুন। এই ফেসপ্যাকটি নিয়মিত ব্যবহার করার ফলে ত্বকের যাবতীয় দাগ দূর হবে এবং ত্বককে আগের চেয়ে বেশি উজ্জ্বল ময় করে তুলতে এটি সহায়তা করবে।
৩য় ফেস প্যাকঃ
- এজন্য প্রথমে আপনাদের চিয়া সিড নিতে হবে, নিতে হবে ওটস, আরো নিতে হবে অ্যালোভেরা জেল। এরপর এই তিনটি উপকরণকে একসঙ্গে মিস করে ত্বকে লাগিয়ে দিতে হবে। ত্বকে লাগিয়ে ২০ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে। ত্বকে এটি ভালোভাবে ম্যাসাজ করে লাগাতে হবে। এই ফেসপ্যাকটি ব্যবহারে ত্বকের ব্রণের সমস্যা দূর হবে। একই সঙ্গে এটি ত্বককে পরিষ্কার করতে সহায়তা করবে।
৪র্থ ফেস প্যাকঃ
- এজন্য প্রথমে আপনাদের ১টি পাত্রে ২ চামচ গরম দুধ নিতে হবে, এরপর এতে ১ চামচ চিয়া সিড মিশিয়ে দিয়ে ১ ঘন্টার মতো রেখে দিতে হবে। এরপর যখন চিয়া সিড জেলির মতো আকার ধারণ করবে তখন এতে ১ চামচ এলোভেরা জেল এবং ১ চামচ মধু মিশিয়ে দিতে হবে। এছাড়াও আপনারা যদি চান এতে ১ চামচ লেবুর রস মিস করে দিতে পারেন, যদি আপনার ত্বক সংবেদনশীল না হয়। তাহলেই হয়ে গেল নতুন একটি ফেসপ্যাক।
- এই ফেসপ্যাকটি লাগানোর আগে মুখ ভালোভাবে ধুয়ে ফেলবেন। এরপর মুখে গলায় ভালোভাবে এই ফেসপ্যাকটি লাগিয়ে ১৫ থেকে ২০ মিনিট অপেক্ষা করবেন। এরপর তা ধুয়ে ফেলবেন। এটি সপ্তাহে ২ বার ব্যবহার করার ফলে ত্বকের স্বচ্ছ ভাব ফুটে উঠবে।
৫ম ফেস প্যাকঃ
- এজন্য প্রথমে আপনাদের ১ চামচ চিয়া সিড নিতে হবে। নিতে হবে ২ চামচ নারিকেল তেল এবং আরো নিতে হবে ১ চামচ লেবুর রস। এরপর এই তিনটি উপকরণকে একসঙ্গে মিক্স করে ২০ মিনিট এভাবেই রেখে দেন। যখন দেখবেন ২০ মিনিট পর জেল তৈরি হয়ে গেছে তখন এই জেল ত্বকে লাগিয়ে ৩০ অপেক্ষা করুন। তারপর ধুয়ে ফেলুন।
চিয়া সিড সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর
প্রশ্নঃ চিয়া সিড খাওয়ার আগে কতক্ষণ ভিজিয়ে রাখতে হয়?
উত্তরঃ চিয়া সিড খাওয়ার আগে কমপক্ষে ১০ থেকে ১৫ মিনিট ভিজিয়ে
রাখতে হবে। তাহলেই চিয়া সিড পানিতে ভালোভাবে ভিজে জেলির আকার ধারণ করবে। তখন
এই পানিটি চিয়া সিড সহ খেয়ে নিতে পারেন। চিয়া সিড মিশ্রিত এই পানিটি খাওয়ার
ফলে শরীরের নানা অসুখ বিসুখ ভালো হয়ে থাকে।
প্রশ্নঃ চিয়া সিড খেলে কি ওজন বাড়ে নাকি কমে?
উত্তরঃ চিয়া সিড খাওয়ার ফলে ওজন বাড়ে না বরং কমে থাকে। কেননা চিয়া সিড
খাওয়ার ফলে এতে থাকা পর্যাপ্ত পরিমাণে স্বাস্থ্যকর ফ্যাট, প্রোটিন এবং ফাইবার
পাওয়া যায়। যা ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
পাশাপাশি মেটাবলিজম বাড়িয়ে তুলতেও সহায়তা করে। ফলে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে।
প্রশ্নঃ চিয়া সিড কি কিডনির জন্য ক্ষতিকর?
উত্তরঃ হ্যাঁ, চিয়া সিড কিডনি রোগীদের জন্য একটি ক্ষতিকর খাবার।
কেননা এটি খাওয়ার ফলে এতে থাকা পর্যাপ্ত পরিমাণে ফসফরাস ও পটাশিয়াম পাওয়া যায়
যা কিডনির জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। তাই যাদের কিডনি রোগ রয়েছে, তাদের এটি খাওয়ার
আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া উচিত।
প্রশ্নঃ ১ কেজি চিয়া সিডের দাম কত?
উত্তরঃ ১ কেজি চিয়া সিডের দাম ৬০০ টাকা থেকে ৯০০ টাকা হয়ে
থাকে। আর ৫০০ গ্রাম চিয়া সিড এর দাম ৩৫০ টাকা হয়ে থাকে। চিয়া সিড এর দাম একেক
জায়গায় একেক রকম হয়ে থাকে। তবে সাধারণত চিয়া সিড এর দাম এরকম দামের
আশেপাশে হয়ে থাকে।
প্রশ্নঃ প্রতিদিন কতটুকু চিয়া বীজ খাওয়া উচিত?
উত্তরঃ প্রতিদিন ১০০ গ্রাম চিয়া বীজ খাওয়া যেতে পারে। বিশেষজ্ঞরা
এমনটাই জানিয়েছে। তবে দিনে আপনি ২ চামচ পরিমাণ অর্থাৎ ১০ গ্রাম খাওয়ার চেষ্টা
করবেন। তাহলেই চিয়া বীজ খাওয়ার ফলে যে সকল উপকারিতা পাওয়া যায় তা যথাযথভাবে
পেয়ে যাবেন।
প্রশ্নঃ চিয়া সিড রাতে খেলে কি হয়?
উত্তরঃ চিয়া সিড রাতে খাওয়ার ফলে খুব সুন্দর ঘুম হয়। কেননা এতে
রয়েছে ম্যাগনেসিয়াম। এই উপাদানটি মস্তিষ্ককে শান্ত রাখার কাজে সহায়তা করে
থাকে। তাই আপনাদের যদি সঠিকভাবে ঘুম না হয়, তাহলে ঘুমাতে যাওয়ার আগে চিয়া সিড
মিশ্রিত জল খেয়ে ঘুমিয়ে যেতে পারেন। এটি অনিদ্রা সমস্যা কাটাতে সহায়তা করবে।
প্রশ্নঃ চিয়া সিড খেলে কি পেটে গ্যাস হয়?
উত্তরঃ না, চিয়া সিড খাওয়ার ফলে পেটে গ্যাস হয় না। তবে আপনারা যদি
এটি অতিরিক্ত পরিমাণে খেয়ে ফেলেন, তবে হজমের সমস্যা তৈরি হবে। আর হজমের সমস্যা
তৈরি হলে গ্যাস, অ্যাসিডিটি, বদহজম ইত্যাদি নানা পেটের সমস্যা দেখা দিবে।
প্রশ্নঃ গরম দুধে চিয়া বীজ খাওয়া যাবে কি?
উত্তরঃ হ্যাঁ, গরম কালে দুধের সাথে চিয়া বীজ ভিজিয়ে খাওয়ার ফলে
নানা রকম পুষ্টি উপাদান শরীরে পাওয়া যায়। এ সকল পুষ্টি উপাদান গুলোর মধ্যে
অন্যতম হলো ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, প্রোটিন, ফাইবার এবং ক্যালসিয়াম। এসকল
পুষ্টি উপাদানগুলো একসঙ্গে পেতে গরম কালে দুধের সাথে চিয়া বীজ মিশ্রিত করে
খাওয়া যেতে পারে।
প্রশ্নঃ চিয়া সিড মধু দিয়ে খাওয়ার নিয়ম কী?
উত্তরঃ প্রথমে এক গ্লাস পানি নিতে হবে,
তারপর সেই পানিতে ১ চামচ চিয়া সিড এবং ১ চামচ মধু মিশিয়ে দিতে হবে। তারপর
যখন পানি জেলির আকার ধারণ করবে, তখন তা খেয়ে নিতে হবে। এই পানি সকালে ঘুম
থেকে উঠে কিংবা রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে খাওয়া যেতে পারে। এই পানি নিয়মিত
খাওয়ার ফলে অনেক ধরনের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
প্রশ্নঃ চিয়া বীজ কি মুখের দুর্গন্ধ দূর করে?
উত্তরঃ হ্যাঁ, চিয়া বীজ খাওয়ার ফলে মুখের দুর্গন্ধ দূর হয়ে থাকে।
কেননা এই বীজে রয়েছে অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল গুণাবলী। যা মুখের দুর্গন্ধ দূর
করার কাজে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই যাদের মুখে দুর্গন্ধ হয়, তারা চিয়া
বীজ খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারেন। এছাড়াও আপনারা চাইলে উপরের আলোচনা থেকে
গর্ভাবস্থায় চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে আসতে পারেন।
লেখকের শেষ কথা
উপরের আলোচনা থেকে আমরা গর্ভাবস্থায় চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে
বিস্তারিত জেনে এসেছি। আমরা আরো জানতে সক্ষম হয়েছি চিয়া সিড খাওয়ার উপকারিতা
সম্পর্কেও। চিয়া সিড একটি পুষ্টিকর খাবার যা শরীরের নানা অসুখ বিসুখ দূর করার
কাজে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। আমি উপরের আলোচনায় চিয়া সিড খাওয়ার যাবতীয়
নিয়মাবলী।
এটি খাওয়ার ফলে কি ধরনের উপকারিতা পাওয়া যাবে, পাশাপাশি এটি কিভাবে খাওয়ার ফলে
কি ধরনের অপকারিতা হবে। তাও জানিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছি। আশা করছি আপনারা যদি
উপরের আলোচনাটি মনোযোগ সহকারে পড়েন। তাহলে অবশ্যই চিয়া সিড এর যাবতীয় গুণাবলী
সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিতে পারবেন।
রিটেক্স আইটি নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url