গর্ভাবস্থায় বাঙ্গি খাওয়ার উপকারিতা - বাঙ্গি খাওয়ার উপকারিতা

গর্ভাবস্থায় বাঙ্গি খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আপনাদের বিস্তারিত জেনে নেওয়া প্রয়োজন। কেননা বাঙ্গি খাওয়ার ফলে নানা রকম পুষ্টি উপাদান শরীরে পাওয়া যায়। যা শরীরের জন্য অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।

গর্ভাবস্থায়-বাঙ্গি-খাওয়ার-উপকারিতা
গর্ভাবস্থায় বাঙ্গি খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে নিচের দেওয়া লেখাগুলো খুব যত্ন সহকারে পড়ার চেষ্টা করতে হবে। তাহলেই মূলত আপনারা বাঙ্গি খাওয়ার যাবতীয় গুনাগুন সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন।

সূচিপত্রঃ বাঙ্গি খাওয়ার যাবতীয় গুনাগুন সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন 

বাঙ্গি খাওয়ার উপকারিতা 

বাঙ্গি খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আপনারা জানতে চেয়েছেন। আজকের এই পর্বে আমরা বাঙ্গি খাওয়ার যাবতীয় উপকারিতা গুলো আপনাদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করবো। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক। বাঙ্গির একটি ফলের নাম। এই ফলটি খাওয়ার ফলে আমাদের শরীরের নানা উপকার হয়ে থাকে। নিচের আলোচনায় সে সকল উপকারগুলো বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হলোঃ
  1. বাঙ্গিতে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, বিটাক্যারোটিন নামক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এই উপাদানগুলো থাকার কারণে বাঙ্গি খাওয়ার ফলে দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে এটি সহায়তা করে থাকে। তাই দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধিতে আপনারা বাঙ্গি খেতে পারেন।
  2. বাঙ্গিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি রয়েছে। এই ভিটামিন বি চুল পড়া কমাতে সহায়তা করে থাকে। একই সঙ্গে এটি নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে থাকে। তাই নতুন চুল গজাতে এবং চুল পরা প্রতিরোধে বাঙ্গি খেতে পারেন।
  3. বাঙ্গিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ডায়াটারি ফাইবার বা আঁশ জাতীয় উপাদান। যা মূলত খাবার হজম করতে সহায়তা করে থাকে। এর ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়ে থাকে। তাই হজম প্রক্রিয়াকে সহজ করে তুলতে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্ত থাকতে চাইলে বাঙ্গি খেতে পারেন।
  4. বাঙ্গিতে রয়েছে পটাশিয়াম। যার কারণে এটি খেলে উচ্চ রক্তচাপ প্রতিরোধ হয়ে থাকে। একই সঙ্গে মস্তিষ্কে অক্সিজেন প্রবাহে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে। তাছাড়াও এটি শরীরের অবসাদ ভাব দূর করতে সহায়তা করে থাকে।
  5. বাঙ্গিতে যেহেতু কোন চর্বি বা কোলেস্টেরল থাকে না। তাই বাঙ্গির শরবত খেলে খাবারে অরুচি, নিদ্রাহীনতা, আলসার ও এসিডিটি প্রতিরোধ হয়ে থাকে। তাই আপনারা এ ধরনের সমস্যাগুলো থেকে দূরে থাকতে চাইলে বাঙ্গি খেতে পারেন।
  6. বাঙ্গি খাওয়ার ফলে ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণ থাকে, স্ট্রেসের বিপক্ষে এটি লড়াই করে থাকে এবং ইমিউন সিস্টেমকে ঠিক রাখতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে।
  7. গর্ভকালীন সময়ে গর্ভবতী মা বেশি বেশি বাঙ্গি খেতে পারেন। কেননা বাঙ্গি খাওয়ার ফলে শরীরে রক্ত তৈরি হয়। কারণ এতে থাকা ফলিক এসিড রক্ত তৈরিতে সহায়তা করে থাকে। বিশেষ করে গর্ভাবস্থায় মায়ের শরীর অনেক দুর্বল হয়ে যায়। যার কারণে এই সময় বাঙ্গি খাওয়া অনেক বেশি প্রয়োজন।
  8. বাঙ্গি খাওয়ার ফলে ত্বকে বয়সের ছাপ পড়ে না। যখন ত্বকের কোষ নষ্ট হয়ে যায় তখন বাঙ্গি সেটাকে ঠিক করে ফেলে। বাঙ্গিতে থাকা প্রোটিন কম্পাউন্ড ত্বককে আরো সুন্দর করে তুলতে সহায়তা করে।বাঙ্গি খাওয়ার ফলে ত্বকের ব্রণ বা একজিমার সমস্যা দূর হয়ে থাকে। এজন্য প্রতিদিন এক গ্লাস করে বাঙ্গির শরবত খেতে হবে। তাহলে এ ধরনের সমস্যা হলে সহজেই দূর হবে।
  9. বাঙ্গিতে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন সি এবং বিটাক্যারোটিন। যার ফলে এই দুইটি উপাদানের সংমিশ্রণ কাটাছেঁড়া দ্রুত শুকাতে সাহায্য করে থাকে। পাশাপাশি এটি বয়সের ছাপ এবং ত্বক কুঁচকে যাওয়া প্রতিরোধ করতে কার্যকরী ভূমিকা রাখে।
  10. বাঙ্গিতে রয়েছে এন্টি ইনফ্লামেটরি বৈশিষ্ট্য। যার কারণে এটি খেলে ক্যান্সার প্রতিরোধ হয়ে থাকে। পাশাপাশি এটি হার্ট এবং ফুসফুসের স্বাস্থ্যের জন্য ব্যাপক উপকারী ভূমিকা পালন করে থাকে।
  11. বাঙ্গিতে রয়েছে অ্যাডিনোসিন নামক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। যা রক্তপাতলা করতে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করে থাকে।
  12. বাঙ্গি খাওয়ার ফলে ধূমপানে ক্ষতিগ্রস্ত ফুসফুস তরতাজা হয়ে ওঠে। নিয়মিত ধূমপান করার ফলে শরীর থেকে ভিটামিন এ কমে যায়। যা পূরণ করতে পারে বাঙ্গি ফল। তাই ধূমপান থেকে নিজের স্বাস্থ্যকে উদ্ধার করতে বাঙ্গি খেতে পারেন।
  13. বাঙ্গিতে রয়েছে অক্সিকাইন নামক উপাদান। যা মূলত কিডনিতে পাথর তৈরি হওয়া থেকে দূরে রাখে এবং কিডনিকে সুস্থ রাখতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই কিডনিকে ভালো রাখতে বাঙ্গি খেতে পারেন।
  14. অতিরিক্ত গরম ও রোদের জন্য সানবার্ন, সামার বয়েল, হিটহাইপার, পাইরেক্সিয়া ইত্যাদি নানা সমস্যা দেখা যায়। বাঙ্গি খাওয়ার ফলে এ ধরনের সমস্যা গুলো প্রতিরোধ হয়ে থাকে।
  15. বাঙ্গির বীজে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার রয়েছে। যা ওজন কমাতে সহায়তা করে থাকে। এছাড়াও এতে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম রয়েছে। যা পেটের মেদ কমাতে সাহায্য করে থাকে। তাই ওজন কমাতে চাইলে বাঙ্গি আপনারা খেতে পারেন।
  16. বাঙ্গি গর্ভবতী মায়েদের জন্য অনেক উপকারী। এতে প্রচুর পরিমাণে ফোলেট রয়েছে। যা দেহে পানি জমা হতে দেয় না। এর ফলে অতিরিক্ত সোডিয়াম দেহ থেকে বের করে দিতে এটি কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে।
  17. যাদের ঘুমের সমস্যা রয়েছে তারা অবশ্যই বাঙ্গি খেতে পারেন। বাঙ্গি খাওয়ার ফলে স্নায়ু ও দেহের কোষকলাকে এই ফলটি এমনভাবে বিশ্রাম দেই যা সুন্দর ঘুমের জন্য অত্যন্ত কার্যকরী।
  18. বাঙ্গিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি। যা আলসার প্রতিরোধে বা এর চিকিৎস্থায় কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে।
  19. বাঙ্গিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পানি। যা গরমে শরীরের তাপমাত্রা ঠিক রাখার ক্ষেত্রে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে। এছাড়াও বাঙ্গি খাওয়ার ফলে নারীদের হাড়ের ভঙ্গুরতা রোধ করতে সহায়তা করে থাকে। পাশাপাশি এটি পুরুষের হাড় মজবুত করে তুলতে সাহায্য করে।
  20. বাঙ্গি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য একটি আদর্শ ফল হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। কারণ এতে চিনির পরিমাণ খুবই কম রয়েছে। তাই নিঃসন্দেহে ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীরা এটি খেতে পারেন।
  21. বাঙ্গি মূলত পানি শূন্যতা দূর করতে ভূমিকা পালন করে থাকে। বাঙ্গির মোট ওজনের শতকরা ৯০ ভাগই থাকে পানি। অর্থাৎ শরীরের প্রয়োজনীয় পানির ঘাটতি পূরণ করে কিংবা শরীরকে মশ্চারাইজড রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাই আপনার খাদ্য তালিকায় বাঙ্গি যোগ করতে পারেন। 
  22. এক গ্লাস বাঙ্গির রস আপনার পেট ঠান্ডা রাখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। এক গ্লাস বাঙ্গির রস খাওয়ার ফলে আপনার অস্বস্তি ভাব দূর হবে। আপনার শরীরকে সুস্থ রাখতে এটি সহায়তা করবে।
  23. গরমের সময় শরীর থেকে অনেক পানি বেরিয়ে যায়। বাঙ্গি খাওয়ার ফলে এই পানির ঘাটতি পূরণ হয়ে থাকে এবং শরীরকে এটি হাইড্রেট রাখতে সহায়তা করে।
  24. বাঙ্গিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে থাকে।
  25. বাঙ্গিতে সুগারের পরিমাণ অনেক কম রয়েছে। এই ফলের গ্লাইসেমিক ইনডেক্সও অনেক বেশি না। তাই ডাইবেটিস রোগীরা এই ফলটি 90 থেকে 100 মিলিগ্রাম খাদ্য তালিকায় নিঃসন্দেহে রাখতে পারেন। তবে অতিরিক্ত খাওয়ার চেষ্টা করবেন না।
  26. বাঙ্গিতে থাকা ক্যালসিয়াম শরীরের হাড় মজবুত করতে এবং হাড়ের ভঙ্গুরতা রোধ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।

বাঙ্গি খাওয়ার নিয়ম

বাঙ্গি খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে আপনাদের বিস্তারিত জেনে নেওয়া প্রয়োজন। আজকের এই পর্বে আমরা বাঙ্গি খাওয়ার যাবতীয় নিয়মাবলী বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করবো। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক। মূলত গ্রীষ্মকালীন ফল হলো বাঙ্গি। বাঙ্গি আকারে বেশ ভালো বড় হয়। বাঙ্গি খাওয়ার জন্য প্রথমে এটিকে ছোট ছোট টুকরো করে কেটে নিতে হবে।

অথবা বাঙ্গি দিয়ে শরবত বা ইস্মুদি তৈরি করেও খেতে পারেন। আমাদের মধ্যে এমন অনেকেই আছে যারা বাঙ্গিতে চিনি মিশিয়ে খেয়ে থাকে। চিনি দিয়ে বাঙ্গি খেলে এর উপকারিতা পরিপূর্ণভাবে পাওয়া যায় না। আর এমনিতেই চিনি শরীরের জন্য ক্ষতিকর। তাই চিনি বাদ দিয়ে খেতে হবে। চিনির বিকল্প গুড় অল্প পরিমাণে যোগ করে খেতে হবে।

আরো পড়ুনঃ তরমুজের ১৮টি উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিন   

বাঙ্গি খাওয়ার ফলে তেমন কোন অপকারিতা হয় না। কিন্তু অপকারিতা নেই মনে করে অতিরিক্ত পরিমাণে এটি খাওয়া যাবে না। অতিরিক্ত পরিমাণে বাঙ্গি খেলে সুগার লেভেল বেড়ে যেতে পারে। এছাড়াও যাদের কিডনির সমস্যা রয়েছে তাদের কিডনির সমস্যা আরো বৃদ্ধি পাবে। তাই কিডনি রোগীদের অতিরিক্ত পটাশিয়াম যুক্ত বাঙ্গি খাওয়ার প্রয়োজন নেই। এতে ক্ষতি হতে পারে। এভাবে বাঙ্গি খেতে হবে।

গর্ভাবস্থায় বাঙ্গি খাওয়ার উপকারিতা 

গর্ভাবস্থায় বাঙ্গি খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আপনারা জানতে চেয়েছেন। আজকের এই পর্বে আমরা গর্ভকালীন সময়ে বাঙ্গি খাওয়ার যাবতীয় উপকারিতা গুলো বিস্তারিত ভাবে জানানোর চেষ্টা করবো। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক। গর্ভকালীন সময়ে বাঙ্গি খাওয়ার ফলে বাঙ্গিতে থাকা ফলিক অ্যাসিড পাওয়া যায়। যা রক্ত তৈরিতে সাহায্য করে থাকে। আর এজন্য অন্তঃসত্ত্বা মায়ের জন্য বাঙ্গি খাওয়া অনেক বেশি কার্যকরী। এছাড়াও বাঙ্গিতে তেমন কোনো চর্বি নেই।

গর্ভাবস্থায়-বাঙ্গি-খাওয়ার-উপকারিতা-2
যার কারণে দেহের অতিরিক্ত ওজন বাড়বে না। তাই গর্ভকালীন সময়ে বাঙ্গি খেয়ে ওজন বাড়ার কোন আশঙ্কা নেই। নির্দ্বিধায় খাওয়া যেতে পারে। তাছাড়াও বাঙ্গি খাওয়ার ফলে গর্ভকালীন সময়ে নানা রকম অসুখ-বিসুখ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। বিশেষ করে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, এসিডিটি, আলসার, নিদ্রাহীনতা, ক্ষুধামান্দ্য সহ নানা রকম রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এছাড়াও গর্ভকালীন সময়ে বাঙ্গি খাওয়ার ফলে ত্বকের নানা রকম সমস্যা থেকে মুক্তি মিলে থাকে।
গর্ভকালীন সময়ে অনেক সময় হজমের সমস্যা হতে পারে। তাই এই সময় যদি বাঙ্গি খাওয়া যায়। তাহলে হজমের সমস্যা দূর হবে। কারণ বাঙ্গিতে রয়েছে খাদ্য আঁশ বা ফাইবার যা হজমের সমস্যা কাটিয়ে তুলে। এছাড়াও এটি পেট পরিষ্কার, কোষ্ঠকাঠিন্য ধরে রাখতে সহায়তা করে থাকে। তাছাড়াও নিয়মিত বাঙ্গি খেলে মলত্যাগ এবং পেট হালকা হয়। তাছাড়াও গর্ভকালীন সময়ে বাঙ্গি খাওয়ার ফলে মস্তিষ্কে অক্সিজেন প্রবাহে এটি সহায়তা করে।

আরো পড়ুনঃ ত্রিফলার ১১টি উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন     

যার ফলে শরীরের যাবতীয় অবসাদ ভাব দূর হয়ে থাকে। তাই গর্ভবতী মায়েদের জন্য বাঙ্গি এই সময় অনেক বেশি উপকারী। এই সময় নিয়মিত বাঙ্গির শরবত খেলে খাবারের অরুচিভাব, আলসার ও এসিডিটি দূর হয়। তাই গর্ভবতী মায়েরা গর্ভকালীন সময়ে নির্দ্বিধায় বাঙ্গি খেতে পারেন। এছাড়াও আপনারা চাইলে উপরের আলোচনা থেকে গর্ভাবস্থায় বাঙ্গি খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে আসতে পারেন।

বাঙ্গির পুষ্টিগুণ

বাঙ্গির পুষ্টিগুণ সম্পর্কে আপনারা জানতে চেয়েছেন। আজকের এই পর্বে আমরা ভাঙ্গির যাবতীয় পুষ্টিগুণ গুলো আপনাদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করবো। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক। বাঙ্গি একটি রসালো ফল। এই রসালো ফলটি মিষ্টি কম হাওয়াই অনেকেই এটি খেতে পছন্দ করে না। এই ফলটি মিষ্টি কম হলেও পুষ্টিগুনে ভরপুর। তাই বাঙ্গিকে অবহেলা করার কোন উপায় নেই। বাঙ্গির পুরোটাই জলীয় অংশে ভরপুর। এটি ভিটামিন সি, শর্করা ও সামান্য ক্যারোটিন সমৃদ্ধ। চলুন তাহলে আজকে আমরা দেখে নেই বাঙ্গিতে কি কি পুষ্টগুণ রয়েছে সেই সম্পর্কে।

প্রতি ১০০ গ্রাম বাঙ্গিতে

পানি রয়েছে ৭৩.২ গ্রাম, আমিষ রয়েছে ২.৯ গ্রাম, শর্করা রয়েছে ২৩,৮ গ্রাম, ক্যালসিয়াম রয়েছে ১১ মিলিগ্রাম, আয়রন রয়েছে ১.৮ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি১ রয়েছে ৭.০২ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি২ রয়েছে ১১.০৫ মিলিগ্রাম, ভিটামিন সি রয়েছে ৫১ মিলিগ্রাম, ভিটামিন এ রয়েছে ৮৫ মিলিগ্রাম, খাদ্য শক্তি রয়েছে ১০৪ কিলোক্যালোরি, ফাইবার রয়েছে ১ গ্রাম, প্রোটিন রয়েছে ১ গ্রাম, পটাশিয়াম রয়েছে ১৫৭ মিলিগ্রাম, ম্যাগনেসিয়াম রয়েছে ১২ মিলিগ্রাম।

বাঙ্গি খাওয়ার অপকারিতা

বাঙ্গি খাওয়ার অপকারিতা সম্পর্কে আপনারা জানতে চেয়েছেন। আজকের এই পর্বে আমরা বাঙ্গি খাওয়ার অপকারিতা সম্পর্কে আপনাদের বিস্তারিত জানানোর চেষ্টা করবো। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক। বাঙ্গি খাওয়ার ফলে যেমন নানা ধরনের উপকারিতা হয়। ঠিক তেমনি বাঙ্গি খাওয়ার ফলে নানা ধরনের অপকারিতাও সাধিত হয়ে থাকে। বাঙ্গিতে সাধারণত প্রাকৃতিক চিনি পাওয়া যায়। যার কারণে বাঙ্গি অতিরিক্ত খেলে রক্তের শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি পায়।

যা ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীদের জন্য ক্ষতিকর। এছাড়াও বাঙ্গিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে পটাশিয়াম থাকে। যার কারণে কিডনি আক্রান্ত রোগীরা অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে তাদের জন্য এটি বিপদ ডেকে আনে। এছাড়াও কিছু মানুষের ক্ষেত্রে বাঙ্গি খাওয়ার ফলে পেট ফাঁপা, গ্যাস বা ডায়েরিয়ার মতো নানা সমস্যা দেখা দেয়। এছাড়াও কিছু মানুষের ক্ষেত্রে বাঙ্গি খাওয়ার ফলে এলার্জি সমস্যা দেখা দিতে পারে। আর এলার্জি সমস্যা দেখা দিলে ত্বকে চুলকানি, ফুসকুড়ি কিংবা শ্বাসকষ্টের মতো সমস্যা তৈরি হতে পারে। বাঙ্গিতে আঁশে লিসটেরিয়া নামক ব্যাকটেরিয়া থাকে।

যার কারণে অনেক ডাক্তার গর্ভবতী নারীদের গর্ভকালীন সময়ে বাঙ্গি এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেয়। রাতে যেহেতু ডাইজেস্টিভ সিস্টেম ধিরে চলে। যার কারণে রাতে চিনি এবং এসিড খাবার এনে চলা উচিত। যেহেতু বাঙ্গি এ ধরনের খাবার তাই রাতে বাঙ্গি খাওয়া থেকে দূরে থাকতে হবে। তাছাড়াও অনেকে বাণীকে চিনি বা কাঁচা লবণ এর সাথে মিশিয়ে খাই।

আরো পড়ুনঃ বহেরা খাওয়ার ১০টি উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন

আর চিনিকে বলা হয় সাদা বিষ এবং লবণ রক্তচাপ ও স্থুলতা বৃদ্ধি করে থাকে। তাই বাঙ্গি এভাবে খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। এসব নিয়ম মেনেই বাঙ্গি খেতে হবে। তাহলেই বাঙ্গির যাবতীয় উপকারিতা গুলো পাওয়া যাবে। এছাড়াও আপনারা চাইলে উপরের আলোচনা থেকে গর্ভাবস্থায় বাঙ্গি খাওয়ার উপকারিতা এবং বাঙ্গি খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে আসতে পারেন।

বাঙ্গি চাষ পদ্ধতি

বাঙ্গি চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে আপনারা জানতে চেয়েছেন। আজকের এই পর্বে আমরা বাঙ্গি চাষ করার যাবতীয় পদ্ধতি আপনাদের সামনে বিস্তারিত তুলে ধরার চেষ্টা করবো। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক। সাধারণত বাঙ্গি এক ধরনের শশা জাতীয় ফল। যার অন্য নাম খরমুজ, কাকুর, ফুটি। দেশের প্রায় সব জায়গাতেই গ্রীষ্মকালে বাঙ্গি পাওয়া যায়। কারণ এই সময় বাঙ্গির উৎপাদন হয়ে থাকে। বাঙ্গি গাছ দেখতে অনেকটা শসা গাছের মতো লতানো ধরনের। চলুন তাহলে আমরা এর চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত দেখে নেই।

বাঙ্গি-চাষ-পদ্ধতি
বীজ বপণের সময়ঃ

বাঙ্গি সাধারণত গ্রীষ্মকালীন একটি ফল। গ্রীষ্মকালে এই ফলের উৎপাদন হয়ে থাকে। মার্চ থেকে এপ্রিল মাসে বাঙ্গি ফলের বীজ বপন করা হয়ে থাকে।

জলবায়ু ও মাটিঃ

বাঙ্গি চাষের জন্য জলবায়ু ও মাটি অনেক বেসি গুরুত্বপূর্ণ। বাঙ্গি সাধারণত চাষের জন্য শুষ্ক ও উষ্ণ জলবায়ু অঞ্চলের প্রয়োজন পড়ে। এই জলবায়ু অঞ্চলেই বাঙ্গি চাষের জন্য সবচেয়ে উপযোগী। উর্বর বেলে দোআঁশ ও পলি মাটি বাঙ্গি চাষের জন্য আদর্শ মাটি হিসেবে বিবেচিত হয়। এই মাটিতে বাঙ্গি চাষ করলে ভালো ফলন পাওয়া যায়।

চারা রোপণঃ

বাঙ্গি চাষের জন্য জমিতে আড়াআড়ি চাষ ও মই দিয়ে জমি প্রস্তুত করতে হবে। বাঙ্গির বীজ সাধারণত জাত বেদে নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারিতে বপন করা হয়ে থাকে। প্রায় ৫ ফুট থেকে ৬.৬৭ ফুট দূরে দূরে ১.৩৩ ফুট চওড়া ও গভীর মাদা তৈরি করে প্রতি মাদায় ৪ থেকে ৫ টি বীজ বপন করা হয়। চারা গজানোর পর ২থেকে ৩টি রেখে বাকিগুলো তুলে ফেলতে হয়।

জাত পরিচিতিঃ

দেশে মূলত বাঙ্গির অনুমোদিত কোন ধরনের জাত নেই। প্রধানত দুই জাতের বাঙ্গি দেখতে পাওয়া যায়। একটা বেলে ও আরেকটি হলো এঁটেল। বেলে বাঙ্গির শাঁস নরম হয়ে থাকে, খোসা গুলো খুব পাতলা ধরনের, শাঁস খেতে বালি বালি লাগে, তেমন মিষ্টি লাগে না। অন্যদিকে এঁটেল বাঙ্গির শাঁস কচকচে ধরনের, তবে একটু শক্ত ধরনের হয়ে থাকে এবং তুলনামূলকভাবে বেশি মিষ্টি স্বাদের। বাঙ্গি লম্বাটে হলেও গোলাকার মিষ্টি কুমড়ার মতো বাঙ্গিও দেখতে পাওয়া যায়। এ প্রজাতির বাঙ্গির অপর নাম হলো চিনা বাঙ্গি।

বিশেষ পরিচর্যাঃ

বাঙ্গি চাষের জন্য বাঙ্গির পরিচর্যার ব্যবস্থা করতে হবে। বাঙ্গি ফল যাতে পচে না যায় এজন্য জমিতে খড় বিছিয়ে রাখতে হবে। অতিরিক্ত ফল ধরলে গাছ প্রতি চার থেকে পাঁচটি ফল রেখে বাকি সব ফল ছাঁটাই করে দিতে হবে। এতে চার পাঁচটি রাখা ফলগুলো ভালো মানের ফলে পরিণত হবে। নিয়মিত আগাছা পরিষ্কার করতে হবে, পানি নিষ্কাশনের উপর মনোযোগ দিতে হবে। বাঙ্গির ফলে মাছি, পোকা দমনের জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রতিকারের ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে।

বাঙ্গি সংগ্রহ ও পরবর্তী ব্যবস্থাপনাঃ

বাঙ্গির রং যখন হলদে হয়ে যাবে কিংবা ফল ফেটে যাওয়া শুরু করবে বা কোন কোন জাতের বোঁটা বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। তখন বুঝে নিতে হবে ফল উত্তোলনের সময় হয়ে গেছে। দেরি না করে খুব তাড়াতাড়ি বাঙ্গি ফল তুলে নিতে হবে। এরপর ফল সাবধানে পরিবহন করতে হবে। সাধারণত বাঙ্গি ফল প্রতি শতাংশ জমিতে ৮০ থেকে ১০০ কেজি ফলন হয়ে থাকে। ফলের ওজন ১ থেকে ৪ কেজি হতে দেখা যায়। এছাড়াও আপনারা চাইলে উপরের আলোচনা থেকে গর্ভাবস্থায় বাঙ্গি খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে আসতে পারেন।

রূপচর্চায় বাঙ্গির উপকারিতা

রূপচর্চায় বাঙ্গির উপকারিতা সম্পর্কে আপনারা বিস্তারিত জেনে নিতে পারেন। আজকের এই পর্বে আমরা রূপচর্চায় বাঙ্গির যাবতীয় উপকারিতা গুলো এবং বাঙ্গি দিয়ে কিভাবে রূপচর্চা করা যায় তার সবকিছু বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করবো। চলুন তাহলে জেনে নেয়া যাক। বাঙ্গি যেমন শরীরের জন্য ব্যাপক উপকারী ঠিক তেমনি এটি ত্বকের জন্যও ব্যাপক কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে।

যাকে প্রাকৃতিক ব্লিচ বলা হয়ে থাকে। অর্থাৎ প্রাকৃতিক ভাবেই ত্বককে বাঙ্গি হেয়ার পলিশ করে থাকে। এটি ত্বকের কালচে ভাব, রোধে পড়া দাগ দূর করে। বাঙ্গিতে থাকা মিনারেল, প্রো ভিটামিন এ, পটাশিয়াম ও ফাইবার প্রাকৃতিক ভাবেই ত্বক পরিষ্কার করে থাকে এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে থাকে। এটি নিয়মিত ব্যবহারে ত্বকের বলিরেখা কমে থাকে। এই ফলটি এমন একটি ফল যা ত্বকের যত্নে ব্যাপক কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে। আসুন এবার আমরা ত্বকের যত্নে এটি কিভাবে আপনারা ব্যবহার করবেন তা জেনে নিই।
  1. প্রথমে এক চামচ বাঙ্গির শাঁস নিতে হবে, এক চামচ মটর ডালের বাটা নিতে হবে, একটি ডিমের কুসুম নিতে হবে, কয়েক ফোটা লেবুর রস এবং এক চামচ মধু নিতে হবে। এরপর সবগুলো উপকরণকে একসঙ্গে মিস করে পেস্ট তৈরি করে নিতে হবে। তারপর পেস্টটি মুখে লাগিয়ে ম্যাসাজ করতে হবে। এরপর যখন শুকিয়ে যাবে তখন পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলবেন।
  2. প্রথমে এক চামচ বাঙ্গির পেস্ট নিয়ে এর সঙ্গে এক চামচ দুধ ও এক চামচ মধু মেশাতে হবে। তারপর এই প্যাকটি ত্বকে লাগিয়ে 20 মিনিট রেখে দিতে হবে। এরপর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। এই ফেসপ্যাকটি ব্যবহারে রোদে পড়া ভাব দূর হবে এবং সেই সাথে বাঙ্গির সঙ্গে লাল আটা মিশিয়ে ত্বকে ঠিকঠাক ম্যাসাজ করলে ত্বকের অনেক উপকার হবে।
  3. আরো পড়ুনঃ গর্ভাবস্থায় আলু বোখারা খাওয়ার ৪টি উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন    

  4. প্রথমে বাঙ্গির পেস্ট তৈরি করুন। তারপর এর সাথে টক দই মিস করে দিন। তারপর তা আপনার মুখে লাগিয়ে রাখুন। যখন এটি শুকিয়ে যাবে তখন পানি দিয়ে তা ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে এই ফেসপ্যাকটি দুইবার ব্যবহার করলে এটি ত্বকের প্রাকৃতিক ক্লিনজারের কাজ করবে।

লেখকদের শেষ কথা

উপরের আলোচনা থেকে আমরা গর্ভাবস্থায় বাঙ্গি খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে এসেছি। আমরা আরো জানতে সক্ষম হয়েছি বাঙ্গি খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কেও। বাঙ্গি একটি গ্রীষ্মকালীন ফল। এই ফলটি খেতে তেমন সুস্বাদু না হলেও এর রয়েছে নানা পুষ্টিগুণ। যেগুলো আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। আমি উপরের আলোচনায় বাঙ্গি খাওয়ার যাবতীয় গুনাগুন গুলো বিস্তারিতভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।

আশা করছি আপনারা যদি উপরের আলোচনাটি ভালোভাবে পড়তে পারেন। তাহলে বাঙ্গি খাওয়ার যাবতীয় ভালো দিকগুলো এবং একই সঙ্গে পানির খাবার যাবতীয় খারাপ দিকগুলো জানতে পারবেন। পাশাপাশি আপনারা বাঙ্গি কেমন করে খেলে এর যাবতীয় উপকারিতা গুলো পাওয়া যাবে সেই সম্পর্কেও জানতে পারবেন। আশা করছি আপনারা উপরের আলোচনাটি পড়ার মাধ্যমে উপকৃত হতে পারবেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

রিটেক্স আইটি নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url